মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়কর রেকর্ড প্রকাশ করেছে দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। সেখান দেখা গেছে গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর আয়করই দেননি তিনি। এছাড়া টাইমসের রিপোর্টে আরো একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে যে পরিমাণ আয়কর দিয়েছেন ট্রাম্প তারচেয়ে বেশি দিয়েছেন ভারতকে! অবশ্য নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টটিকে ‘ফেক নিউজ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে আমেরিকায় মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে একই সময়ে ভারতে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ ডলার ট্যাক্স দিয়েছে তাঁর সংস্থা। পানামা ও ফিলিপাইনেও অনেক টাকা কর দিয়েছিল তাঁর সংস্থা।
২০১৬ সালে যে বছর তিনি হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেবারও মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছিলেন ট্রাম্প। গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর ট্যাক্সই দেননি তিনি। কর প্রক্রিয়ায় আইনের ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে তিনি দেখিয়েছেন যে, যত টাকা আয় হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
একই সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, হেয়ার স্টাইলিং ও বিমান সংক্রান্ত খরচের ওপর কর মুওকুফ করিয়ে নিয়েছেন তিনি। মেয়ে ইভাঙ্কার হেয়ার স্টাইলিংয়ের বিপুল বিল পুরোটাই ট্যাক্স-ফ্রি। এই রিপোর্ট নিয়ে এখন উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মুখে এই রিপোর্ট প্রকাশে বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের সাথে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অবতীর্ণ হবেন ট্রাম্প।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি আসলে আয়কর দিয়েছি। সেটা নিয়ে অডিট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে অডিট হয়েই চলেছে।’ সব দোষ কর কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘কর কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে না। তারা আমার সঙ্গে খুবই কারাপ ব্যবহার করছে।’
অন্য রাষ্ট্রপতিরা নিজেদের ট্যাক্স স্টেটমেন্ট প্রকাশ করলেও ট্রাম্প কখনো করেননি। ১৯৭০ সালের পর থেকে তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি আয়করের রিটার্ন প্রকাশ করলেন না। এটা অবশ্য আইন অনুযায়ী তিনি করতে বাধ্য এমন নয়। তবে মার্কিন প্রসিডেন্টরা স্বচ্ছতার জন্য নিজের আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করে থাকেন।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম দুই বছরে ভারত থেকে ২৩ লাখ ডলার আয় হয় ট্রাম্পের। তবে অধিকাংশ অর্থ ডোনাল্ড ট্রাম্প আয় করেছেন তাঁর স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড রিয়েল এস্টেট থেকে।
তবে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট থেকে মূলত যেটি উঠে এসেছে যে সফল ব্যবসায়ী হওয়ার দাবি করলেও ট্রাম্পের অধিকাংশ ব্যবসা থকেই কোনো লাভ হচ্ছেনা। গল্ফ কোর্স থেকে বিলাসবহুল হোটেল, সবই ধুঁকছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের এক দশক ধরে বিরোধ চলছে। ট্রাম্প তাঁর বিশাল ক্ষতি দেখিয়ে ৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের ট্যাক্স রিফান্ড দাবি করেছেন। বিরোধ সেটা নিয়েই। সংবাদপত্রটির দাবি, ট্রাম্প ও তাঁর কম্পানিগুলোর গত দুই দশকের আয়কর রিটার্নের তথ্য তাদের হাতে এসেছে। এই নথি খতিয়ে দেখে তাদের মনে হয়েছে, এ নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।