মহামারি করোনায় শিল্পঋণ বিতরণ ও আদায়ে বড় ধাক্কা এসেছে। করোনাকালের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে শিল্পঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এ সময়ে শুধু মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ কমেছে ৪৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্পের মেয়াদি ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ। কমার হার রেকর্ড ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে, একই সময়ে শিল্পঋণ আদায় কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ সময়ে শুধু মেয়দি শিল্পঋণ আদায় কমেছে প্রায় ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে বড় শিল্পের মেয়াদি ঋণ আদায় কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে আশার কথা এ সময়ে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। মূলত করোনার কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেওয়ায় খেলাপি ঋণ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের শিল্প খাত। কারণ জীবন রক্ষার তাগিদে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তাদের কেউ নতুন বিনিয়োগের কথা চিন্তাও করতে পারেননি। এতে শিল্পঋণ বিতরণ ও আদায় অস্বাভাবিক হারে কমে যায়।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মহামারি করোনার কারণেই শিল্প খাতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায় কমে গেছে। তবে এখন করোনা ভীতি কমেছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের পাশাপাশি নতুন ঋণের চাহিদা করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে শিল্পঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত তিন মাসে শিল্পঋণ বিতরণ কম হয়েছে ৪০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা বা ৩৫.২৫ শতাংশ। এ সময়ে শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ কমেছে ৪৫.৪৩ শতাংশ ও চলতি মূলধন ঋণ কমেছে ৩২.৮০ শতাংশ। মেয়াদি শিল্পঋণের মধ্যে বড় শিল্পের ঋণ বিতরণ কমেছে ৪৩.২০ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ৩৭.৮২ শতাংশ ও ক্ষুদ্র শিল্পে রেকর্ড ৭১.২১ শতাংশ। অন্যদিকে বড় শিল্পে চলতি মূলধন ঋণ কমেছে ৩৩.৪৪ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ২৪.৫৬ শতাংশ ও ক্ষুদ্র শিল্পে ৩৬.৪৩ শতাংশ।
এ ছাড়া আগের প্রান্তিক জানুয়ারি থেকে মার্চের সঙ্গে তুলনা করলেও এই তিন মাসে শিল্পঋণ বিতরণ কমেছে ১৮.৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ কমেছে ২৩.৯৩ শতাংশ ও চলতি মূলধন ঋণ কমেছে ১৭.৯৫ শতাংশ। মেয়াদি শিল্পঋণের মধ্যে বড় শিল্পের ঋণ বিতরণ কমেছে ২১.৪৯ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ৫.৭২ শতাংশ ও ক্ষুদ্র শিল্পে রেকর্ড ৬০.২৪ শতাংশ। অর্থাৎ করোনাকালে ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণ বিতরণ অনেকটাই ধস নেমেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে শিল্পঋণ আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের একই সময়ে যা ছিল ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত তিন মাসে শিল্পঋণ আদায় কমেছে ২৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বা ৩০.২২ শতাংশ। এ সময়ে শিল্পের মেয়াদি ঋণ আদায় কমেছে ৫৬.৮৮ শতাংশ ও চলতি মূলধন ঋণ কমেছে ২১ শতাংশ। মেয়াদি শিল্পঋণের মধ্যে বড় শিল্পের ঋণ আদায় কমেছে রেকর্ড ৫৯.৭৬ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ৪০.৯২ শতাংশ ও ক্ষুদ্র শিল্পে ৪৪.১৮ শতাংশ। অন্যদিকে বড় শিল্পে চলতি মূলধন ঋণ আদায় কমেছে ১৮.৫৪ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ৩৬.৯৬ শতাংশ ও ক্ষুদ্র শিল্পে ২৬.৬৯ শতাংশ।