কভিডের কারণে ৭৫ শতাংশ ছোট আকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত উদ্যোক্তারা। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের এসএমই খাতের উন্নয়নে ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল রবিবার এই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশেজ্ঞরা বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা না বাড়লে এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বাড়িভাড়া, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ এসব সেবা মূল্যে ভর্তুকির পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রায় দুই হাজার হালকা প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের ওপর এই গবেষণা করা হয়।
টেলিফেনে প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিতে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে নেতৃত্ব দেন অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম ও বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী আতিয়া রহমান।
জরিপে দেখা যায়, ক্ষুদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। লকডাউনের সময়ে হালকা প্রকৌশল খাতের মাত্র ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খোলা ছিল। আংশিক খোলা ছিল ২৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ৬১ শতাংশ পুরোপুরি খুলেছে এবং এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়মিত কাজের সময় কমিয়ে এনেছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়িভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ৭৫ শতাংশ উদ্যোক্তা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। আলোচনায় অংশ নেন মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বিআইডিএস রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল, বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. নারায়ণ দাস প্রমুখ।
গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম বলেন, এসএমই খাতের জন্য সরকারঘোষিত প্রণোদনা ঋণ ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহযোগিতা হিসেবে নিয়েছিল সরকার। তবে এই প্যাকেজ থেকে এসব প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ সহযোগিতা পায়নি। মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে। এমনকি এই ঋণ সম্পর্কে কোনো ধারণাও নেই তাদের। মাত্র ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য আবেদন করেছে। সক্ষমতার অভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষ অবগত নয়। এসব কারণে বন্ধ হওয়া সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বিউটি পার্লার, হোটেল, টেইলারিংয়ের মতো খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, ছোট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ নয়। ঋণ পাওয়ার মতো বার্ষিক সক্ষমতা নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। এ ছাড়া সাধারণত ঋণ দেওয়া হয় ব্যাংকের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কের ভিত্তিতে। অথচ ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক চেনেই না। বিকল্প ব্যবস্থায় ঋণ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ছোট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়িভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।