জ্বর খুব সাধারণ একটি অসুখ। আবার এই জ্বরই কখনো কখনো হয়ে ওঠে আতঙ্কের কারণ। বিশেষ করে করোনার এই সময়ে; নানা রকম জ্বর নিয়ে আলোচনা হলো এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘করোনাকালের অসুখ–বিসুখ’–এর একাদশ পর্বে। প্রতিপাদ্য: এই সময়ে জ্বর। ডা. লুবাইনা হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মতলেবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি ১৩ অক্টোবর প্রথম আলো ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
জ্বর একটি ট্রপিক্যাল ডিজিজ। আমাদের দেশে সাধারণ মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর বেশি হয়। আবার বর্ষাকালে এখানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এ ছাড়া পেটে বা ইউরিনের ইনফেকশন হলে জ্বর হয়। আর এসব জ্বরের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কোভিডের জ্বর।
ডা. মো. মতলেবুর রহমানের কাছ থেকে জ্বরের সঠিক তাপমাত্রা সম্পর্কে জানা গেল। প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ৯৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে গেলে সেই তাপমাত্রাকে জ্বর হিসেবে ধরা হয়। অনেকেরই থার্মোমিটারে তাপমাত্রা এর নিচে থাকে; তবু শরীরের জ্বর জ্বর ভাব অনুভব করেন। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ম্যালেজ বলা হয়ে থাকে। মানে জ্বরের অনুভূতি, কিন্তু জ্বরের প্রমাণ নেই। ম্যালেজকে এ জন্য কখনো জ্বর হিসেবে দেখা হয় না।
করোনাকালে অনেকের জ্বর হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ যদি কোনো ধরনের প্রটেকশন ছাড়া বাইরে ভিড়ের মধ্যে যেয়ে থাকেন বা তাঁর পরিবারে কারও জ্বর হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির জ্বর হলে অবশ্যই করোনা টেস্ট করাতে হবে। আর যদি কোথাও না গিয়েই জ্বর হয়, তাহলে সাধারণ ইনভেস্টিগেশন করেই তাঁর চিকিৎসা করা হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের জ্বর আলাদা করার জন্য কিছু বিশেষ উপসর্গের দিকে লক্ষ রাখতে হয়। যেমন, জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড শরীরব্যথা অনেকটা হাড় ভেঙে গেলে যেমন ব্যথা হয় তেমন ব্যথা হলে, চোখব্যথা থাকলে সেটাকে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে। আবার জ্বরের সঙ্গে বমি বা পাতলা পায়খানা হলে সেটাকে পেটের প্রদাহজনিত জ্বর হিসেবে ধরা হয়। আর কারও যদি জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড ঘাম আর তলপেটে ব্যথা হয়, তাহলে বুঝতে হবে তাঁর ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে।
আমাদের দেশে এখন কোভিড–১৯-এর বিচিত্র রকমের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা না হয়েও অনেকে কোভিডে ভুগছেন। এ ছাড়া যাঁরা হঠাৎ প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন, কাজের ভেতর অনীহা, ক্লান্তি দেখা দিচ্ছে তাঁদের কোভিড হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। এ ধরনের অসুবিধা হলে করোনা টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মো মতলেবুর রহমান।
এখন বেশির ভাগ জ্বর ভাইরাসজনিত কারণে হচ্ছে। এ ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। অথচ জ্বর হলে অনেকেই নিজে নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ জন্য ডা. মো. মতলেবুর রহমানের পরামর্শ হলো, যেকোনো জ্বর হলে প্যারাসিটামল, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ওরাল স্যালাইন খেতে হবে, হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছতে হবে। আর তাতেও যদি জ্বর না যায়, অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অনুষ্ঠানে কোভিডের কোন কোন লক্ষণে হাসপাতালে যাওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কারও যদি জ্বরের সঙ্গে বুকে চাপ লাগে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, পালস অক্সিমিটার যদি ৯৪ থেকে ৯৩–এর নিচে থাকে, তাহলে তাঁকে হাসপাতালে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মৃদু উপসর্গ নিয়ে অনেকে বাসায় নিজে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে তাঁদেরই অনেক রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তাই মৃদু উপসর্গ থাকলে কিংবা সুস্থ হয়ে গেলেও, কোভিড–পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
করোনার পাশাপাশি এ সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশ দেখা যাচ্ছে। এ জ্বর হলে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু পঞ্চম দিনে অবশ্যই ব্লাড টেস্ট করে দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট ও হেমাটোক্রিট যদি বেড়ে গিয়ে প্লাজমা লিকেজ হয়, আর সেই সঙ্গে যদি প্রেশার কমে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে যায়, মাথা ঘোরার সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই তাঁকে হসপিটালাইজড হতে হবে।
জিহ্বা বা কানের নিচের কোর টেম্পারেচার থেকে জ্বর মাপা হয়। এ ছাড়া বগলের নিচে থেকেও জ্বর মাপা যায়। তবে বগলের নিচের তাপমাত্রার সঙ্গে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট যুক্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অনুষ্ঠানে ডা. মো. মতলেবুর রহমান দর্শকদের জ্বরসংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের জবাব দেন।