দেশের করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবেলায় কেস ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা এবং কৌশল উন্নত করতে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত পেশাদারদের জন্য একটি নতুন ই-মেন্টরিং প্লাটফর্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
আজ রবিবার ডাক্তারদের কোভিড-১৯ কেস ম্যানেজমেন্টের জন্য ই-মেন্টরিং প্লাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। সকাল ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বাংলাদেশ তার মামনি মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্প: ইমার্জেন্সি রেসপন্স টু কোভিড-১৯প্যান্ডেমিক এর মাধ্যমে এই উদ্যোগকে সহায়তা করছে। বাংলাদেশে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে সেভ দ্য চিলড্রেন এর মাধ্যমে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার প্রধান অতিথি হিসাবে এই ই-মেন্টরিং প্লাটফর্ম যাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন “আমি গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র এরকম একটি অভিনব ই-মেন্টরিং উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত হতে পেরেছে যা বাংলাদেশের কোভিড-১৯ চিকিৎসা পরিচালনা করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আমি বিশ্বাস করি যে এর ফলে বাংলাদেশি চিকিৎসকরা আরও কার্যকরভাবে রোগীর ব্যবস্থাপনা এবং এই রোগের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।”
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম খুরশিদ আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন – “ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল একটি অন্যতম প্রাচীন ও স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজ যেখান থেকে এদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মেডিকেল শিক্ষার্থী প্রতি বছর তাদের পড়াশুনা শেষ করে দেশের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত হচ্ছেন। ক্লাস-ভিত্তিক শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি এরকম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণের উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। যদিও স্নাতক পর্যায়ে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই এখানকার শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করছে। তবে এই ই-মেন্টরিং এর মাধ্যমে এখন আমাদের বিষজ্ঞ চিকিৎসকরাও তাদের জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারণ করতে পারবে জেনে আমি আনন্দিত।”
বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কাজকে অব্যাহত রাখতে সবক্ষেত্রেই অনলাইন-ভিত্তিক যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণের ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সম্মুখযোদ্ধা বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের যেসব চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের এরকম গুরুতর রোগীদের কেস ম্যানেজমেন্ট বা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের কভিড-১৯ ডেসিগনেটেড হাসপাতালগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে এই প্রশিক্ষণের যাত্রা শুরু হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (ঢামেক) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর মাধ্যমে স্থানীয় ৪০ টিরও বেশি হাসপাতালকে সরাসরি এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে যার মাধ্যমে সরাসরি এক হাজার এবং পরোক্ষভাবে আরো তিন হাজার ডাক্তারদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ই-মেন্টারিং প্ল্যাটফর্ম, প্রজেক্ট ইকো (Project ECHO: Extension for Community Healthcare Outcome)-এর সাথে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের একটি চুক্তির মাধ্যমে এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিতপ্তরকে সহায়তা করবে কোভিড-১৯ ডেসিগনেটেড হাসপাতালগুলোতে এই প্রশিক্ষণসেবার আওতায় নিয়ে আসতে। এর ফলে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবায় বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত ও দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ চিকিৎসকদের উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন ও প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডাঃ খান আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের পরিচালক প্রফেসর জন ডেল ভ্যাল, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান মানেন এবং ইউএসএআইডি বাংলাদেশের এক্টিং মিশন ডিরেক্টর জন আলেলো। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাবৃন্দরা।
করোনা মহামারীর এ সময়ে সবরকম স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অনুষ্ঠানটি অনলাইনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় ঢামেক থেকে যেখানে জুম-এর মাধ্যমে আরো বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গরা যুক্ত হন ।
ওনো ভ্যান মানেন তার সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “আজকের এই উদ্যোগ প্রমান করে যে, যেকোনো দুর্যোগে সরকারি, বেসরকারি, সুশীল সমাজ এবং সবার এক হয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। এই প্রশিক্ষণটি দেশি-বিদেশী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সফলভাবে কার্যকর হবে বলে আশা করছি।”
এই ই-মেন্টরিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের চিকিৎসাসেবায় আরো উন্নত ক্লিনিকাল সেবা নিশ্চিত করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের জীবন বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাবে বলে উপস্থিত সবাই আশা ব্যক্ত করেন।