দেরের জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। তার বাবা মরহুম আবদুল জলিল। মা মরহুমা আনোয়ারা খাতুন। স্ত্রী খাইরুননেছা কাদেরের সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। রেখে গেছেন নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও বন্ধু স্বজন।
তিনি সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেন। অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনা এবং বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে বহুজাতিক কোম্পানী ‘বাটা’তে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদে যোগ দেন।
১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্যসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে আছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস -এর সহ-সভাপতি।
তবে স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে তার সখ্য কাদেরের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম নাটকে অভিনয় শুরু। ১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবেও পুরস্কার লাভ করেন আবদুল কাদের।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে আছেন। ১৯৭৪ সালে ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনে তাঁর অভিনীত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক ’এসো গল্পের দেশে’। থিয়েটার নাটকে প্রায় ৩০টি প্রযোজনা সহ এবং ১০০০টিরও বেশী প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া টেলিভিশনে প্রায় দুই হাজারের বেশী নাটকে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, স্পর্ধা, দুই বোন, মেরাজ ফকিরের মা। এছাড়া টেলিভিশনে প্রায় দুই হাজারের বেশী নাটকে অভিনয় করেছেন। হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নিয়মিত মামার চরিত্রে অভিনয় করেন আবদুল কাদের।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কাজ করেছেন মাটির কোলে, নক্ষত্রের রাত, শীর্ষবিন্দু, সবুজ সাথী, তিন টেক্কা, যুবরাজ, আগুন লাগা সন্ধ্যা, এই সেই কণ্ঠস্বর, আমার দেশের লাগি, প্যাকেজ সংবাদ, সবুজছায়া, কার ছায়া ছিল, দীঘল গায়ের কন্যা, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, আমাদের ছোট নদী, ভালোমন্দ মানুষেরা, দূরের আকাশ, ফুটানী বাবুরা, হারানো সুর, দুলাভাই, অজ্ঞান পার্টি, লোভ, মোবারকের ঈদ, বহুরূপী, এই মেকাপ, ঢুলীবাড়ী, সাত গোয়েন্দা, এক জনমে, জল পড়ে পাতা নড়ে, খান বাহাদুরের তিন ছেলে, ইন্টারনেটের বউ, ঈদ মোবারক, সিটিজেন, হতাই, ফাঁপড়, চারবিবি, সুন্দরপুর কতদুর, ভালবাসার ডাক্তার, চোরাগলী, বয়রা পরিবার ইত্যাদি জনপ্রিয় নাটকগুলোতে।
নাম আব্দুল কাদের হলেও বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের কাছে তিনি বদি নামেই পরিচিত। আজ থেকে ২৬ বছর আগে কথা ১৯৯৪ সালে সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে তিনি বদি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রায় তিন দশক পরেও সেই নাম এখনও দর্শকদের মন থেকে মুছে যায়নি। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ ধারাবাহিকে দুলাভাই চরিত্রেও তিনি হাস্যরসাত্মক অভিনয় দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।