এক জায়গায় চলছে করোনার নমুনা পরীক্ষা, আরেক জায়গায় চলছে টিকা প্রদান কার্যক্রম। ওদিকে করোনায় আক্রান্ত রোগী নিয়ে একের পর এক মানুষ আসছে জরুরি বিভাগে। কেউ কেউ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে বেশিসংখ্যক রোগীই ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সব মিলে টেস্ট, টিকা আর রোগীর চাপে জেরবার অবস্থা।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গতকাল শনিবার ছিল এমন চিত্র। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে। করোনার টিকা নেওয়ার জন্যও মানুষ বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে কোনো কোনো টিকাকেন্দ্রে এসএমএস না থাকলে টিকা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও এসএমএস ছাড়াই প্রথম ডোজের টিকা কার্ড নিয়ে গেলেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি চলছে প্রথম ডোজের টিকাদান কার্যক্রমও।
সূত্র জানায়, গতকাল পিসিআর স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে মোট ১৫৩টি। এ ছাড়া র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে ১২৫টি। রাত ১২টা পর্যন্ত করোনা টেস্টের ফল পেয়েছে ১৮৮ জন। একই দিনে করোনার টিকা নিয়েছে এক হাজার ৫৩ জন।
মুগদা হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ আসিফ রাশেদ বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হলেও অনেক রোগী হাসপাতালমুখী হচ্ছে। ফলে রোগীর ভিড় বেড়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।’
হেল্পলাইন নম্বরে বারবার চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষই দুটি নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। একসঙ্গে বেশি মানুষ সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করায় এই বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। অথচ আরেকটি নম্বর আছে, যা অনেকেই জানে না। স্যাম্পলগুলো ওই তিনটি নম্বরের মাধ্যমেই আসছে।’
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগে নারী কভিড রোগীদের রাখা হয়েছে। ভবনের তৃতীয় তলার একাংশ এবং একাদশ তলা বাদ দিয়ে সপ্তম থেকে দ্বাদশ তলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে নারী-পুৎরুষ পাশাপাশি বেডে দেখা গেছে। অবশ্য এ নিয়ে কারো কোনো অনুযোগ নেই। করোনার এই ভয়াবহ মুহূর্তে বেড পেয়েই খুশি অনেকে।
হাসপাতাল ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম চলছে। গতকাল সর্বমোট এক হাজার ৫৩ জন করোনা টিকা নেয়। এর মধ্যে প্রথমবার নেয় ৩২০ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নেয় ৭৩৩ জন।
উত্তর মুগদা থেকে টিকা নিতে আসা মো. ইলিয়াস নামের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে টিকার জন্য ফরম পূরণ করেছিলাম। গত রাতে মেসেজ পেয়ে আজ দিয়ে যাচ্ছি। নিশ্চিত হয়ে টিকা দিতে আসায় কোনো ধরনের ভিড় নেই।’
মিটফোর্ড হাসপাতালে গতকাল টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকেই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হাসপাতালে আসতে থাকে মানুষ। দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি অনেকে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে। যারা মোবাইলে দ্বিতীয় ডোজের মেসেজ পায়নি কিন্তু টিকা নেওয়ার তারিখ ছিল, তাদেরও টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার জায়গায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্বও মানা হয়নি।
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ উন নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এখানে জায়গাটা ছোট। তবে সব সময় ভিড় থাকে না। আর এখন প্রথম ডোজের পরিমাণ কমে গেলেও তা দেওয়া হচ্ছে। আজ (গতকাল) ৬০০ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। মেসেজ না পেয়েও যারা এসেছে, তাদেরও ব্যবস্থা করে টিকা দেওয়া হচ্ছে।’