বরগুনা পৌর শহরে গতরাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। সোমবার (৭ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে পৌরশহরের গোলাম সরোয়ার সড়কে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ, স্কাউট ও ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই সড়কের অগ্রণী ব্যাংকের বিপরীতে একটি লেপ-তোশকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
মুহূর্তেই তা আশপাশের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
প্রথমে বরগুনার ফায়ার সার্ভিস ইউনিটকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে বিলম্বে আসে। আসার পর তাদের গাড়ির ইঞ্জিনও বিকল হয়ে যায়। পরে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টা করলে তারা গাড়ি সরিয়ে নেয়। এরপর মির্জাগঞ্জ, বেতাগী ও আমতলীর তিনটি ইউনিট নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট চারটি ইউনিটের প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্তত ১৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, বরগুনার ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের গাফিলতির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।
রাতের এ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ওষুধ ব্যবসায়ী মো. হায়দার হোসেনের দোকান। তিনি বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। আমার দোকানও পুড়ে ছাই হয়েছে। এই সড়কে অর্ধশতাধিক লেপ-তোশক, পোশাক, পশুখাদ্য, ওষুধের দোকানসহ স্বত্বাধিকারীদের বসতঘর রয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতেই গলির অন্তত ১৫টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
প্রাণিখাদ্য বিক্রতা ব্যবসায়ী নাসিম আহমেদ বলেন, আমার দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার খাদ্য ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।
আগুন নেভাতে কাজ করছিলেন শহরের বাসিন্দা অরূপ তালুকদার। তিনি জানান, অতিউৎসাহী মানুষের কারণে আগুন নেভাতে গিয়ে আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া একমাত্র খাকদোন নদীর পানি ছিল আগুন নেভানোর ভরসা।
বরগুনার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আহমেদ জানান, খবর পেয়ে বরগুনার ২টি ইউনিট, বেতাগীর একটি, আমতলীর একটি ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে লেপ-তোশকের দোকান হওয়ায় আগুন নেভাতে আমাদের খুব সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, আগুনের উৎস খুঁজে বের করতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
বরগুনার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমদ বলেন, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা ও আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করে। আগুন নেভাতে গিয়ে একজন পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় কয়েকজন আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা আমরা নিরূপণের চেষ্টা করছি।