ঢাকার অদূরে সাভারে দেড় কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে ‘জেনিথ ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্স’ নামের ভূয়া ইন্সুরেন্স কোম্পানির রিং লিডারসহ ১৫ জনকে আটক করেছে র্যাব । এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার,মোবাইল, লিফলেটসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গতকাল (২৪ অক্টোবর) রাতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাভারের শিমুলতলা থেকে তাদের-কে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলো-নড়াইলের মোঃ এরশাদ শেখ (৩১) ও মোঃ নাঈম শেখ (২৬),সাতক্ষীরা জেলার মোঃ শহিদুল্লাহর (২৩),ভোলা জেলার মোঃ ইলিয়াস আহম্মেদ (২৫), মাওলানা মাইনুদ্দিন (২৩) ও মোঃ হিজবুল্লাহ (১৯), কুষ্টিয়ার মোঃ জামাল উদ্দিন (৫২),খুলনা জেলার মোঃ জিয়াউর রহমান (২৫),মোঃ আজিজুল ইসলাম(২০) ও মোঃ রাহাত অনিক(১৯),নরসিংদির মোঃ মহসীন কবির(৪২), গোপালগঞ্জের মোঃ কামরুল শেখ(১৯), ফরিদপুর জেলার হুমায়ুন শেখ (২১) ও মোঃ চাঁন মিয়া(১৯) এবং মৌলভীবাজার জেলার মোঃ বারহাম মিয়া (২০)।
র্যাব জানায়,সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি’নামে একটি ভূয়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন আর্থিক কোম্পানী ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন ব্যক্তি-কে কোম্পানিতে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ অক্টোবর রাতে র্যাব-৪ এর একটি অভিযানিক দল সাভারের শিমুলতলা এলাকায় ‘জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড’এর অফিসে অভিযান পরিচালনা করে।
এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি সিপিইউ,১টি মনিটর,২টি প্রিন্টার,১৫টি রেজিস্টার,১টি মোবাইল,১৪টি সীম কার্ড,৯টি সীল,৩০ টি ভিজিটিং কার্ড,৪টি আইডি কার্ড,২ টি ব্যানার,২৫০টি বায়োডাটা ফরম,২০০ টি লিফলেট,১টি ক্যাশ ভাউচার এবং ৮টি আবেদন ফরম জব্দ করা হয়।
এসময় ৫ জন রিং লিডারসহ প্রতারক চক্রের ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব আরও জানায়,এই প্রতারক চক্র জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে ফুল-টাইম, পার্ট-টাইম চাকুরীর বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। বিজ্ঞাপন দেখে চাকুরী প্রত্যাশী শতশত যুবক-যুবতি ও ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের এমন বিজ্ঞাপন সরলমনে বিশ্বাস করে।
প্রথমে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে রেজিষ্টেশন ফি হিসেবে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫২০ টাকা করে নিত। পরে চাকুরীর নিশ্চয়তা ও মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে পলিসি খুলতে বাধ্য করত।
ইউনিট ম্যানেজার,ব্রাঞ্চ ম্যানেজার,এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার প্রভৃতি পদে ১৮ হাজার ৫০০ হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ইন্সুরেন্স করাতে প্রলুব্ধ করত। চাকুরী পাওয়ার পর মাসের পর মাস অফিসে আসা-যাওয়া করে বেতন না পেয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে প্রদেয় টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি,মারধর এমনকি প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করত।
উল্লেখ্য যে,এই প্রতারক চক্র এর আগেও প্রতারণার দায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একাধিকবার আটক হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উক্ত প্রতারণার দায়ে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় একাধি মামলা রয়েছে। উক্ত বিষয়ে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামীরা উক্ত প্রতারণার সত্যতা স্বীকার করেছে এবং এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।