ঝালকাঠি সংবাদদাতাঃ-ঝালকাঠির রাজাপুরের বাইপাস এলাকার
বেল্লাল হোসেনকে পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির পাশে খেলা করার সময়
নারী ও শিশু পাচারকারি চক্রের সদস্যরা তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়।
এরপর বাংলাদেশের পাচারকারিরা ভারতীয় সীমান্তের পাচারকারিদের
কাছে বিক্রি করে দেয় এ শিশুটিকে। ভারতে নিয়ে আসামের
গোহাটিতে পাহাড়ি এলাকায় এক মদের কারখানায় দীর্ঘ এক
যুগ বন্দি করে কাজ করানো হয়। কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে
ফেনীর পশুরাম সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে তিনশ টাকার
বিনিময়ে বাংলাদেশে আসে শিশু থেকে বেড়ে ওঠা বর্তমানে
সতের বছর বয়সী ওই কিশোর। বেল্লাল হোসেন এখন শুধু তার নাম
বেলাল হোসেন বাড়ি ঝালকাঠির বাইপাস বাবা জসিম উদ্দিন
মায়ের নাম সেলিনা এতটুকুই বলতে পারে। অন্য কিছুই মনে নেই
তার। সেই সূত্র ধরেই ফেনী থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে শুক্রবার রাতে
ঝালকাঠির রাজাপুরের বাইপাস এলাকায় আসে বেল্লাল। স্থানীয়
খসরু নামে এক সবজি বিক্রেতা তাকে আশ্রয় দিয়ে বাবা মাকে
খোঁজার চেষ্টা করেন। এখন থানা পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়
সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে তার পরিবারকে খুঁজে বের করার
উদ্যোগ নিয়েছেন। বেল্লাল বাংলা ভাষা বুঝলেও কথা বলতে পারেননা
বাংলায়। শুধু হিন্দিতেই কথা বলেন। বেলাল জানান, তার বাবা খুব
সকালে বাড়ি থেকে কাজে বের হতেন। ফিরতেন গভীর রাতে। তবে কি
কাজ করতেন তা মনে নেই তার। কাঁচা রাস্তার পাশে টিনের ঘরে মা-
ই সবসময় তাকে আগলে রাখতেন। একমাত্র সন্তান হিসেবে রাখতেন
চোখে চোখে। এরপর সবার অজান্তে শিশু পাচারকারিকে কবলে পড়ে
হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে বারোটি বছর। এই সময়ে বহু
অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। তবুও মাটির
টান বাবা-মায়ের টান ভুলতে পারেননি একটু সময়ের জন্যও। সেই
এক যুগ ধরেই তার লড়াই আর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল মায়ের কাছে
ফিরে আসার। এরপর ভারতের আসামের গোহাটি পাহাড়ের মদের
কারখানার দারোয়ানের কাছে কাকুতি মিনতি করে বের হন বেলাল।
এরপর বাংলাদেশের ফেনী থেকে স্থানীয় রানা নামে এক ব্যবসায়ির
সহযোগিতায় ট্রেনে লক্ষ্মীপুর আসেন। সেখান থেকে লঞ্চযোগে
ভোলা ও বরিশাল হয়ে ঝালকাঠির রাজাপুর বাইপাস এলাকায় আসেন।
তবে এর অধিকাংশ সময়েই তাকে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে
হয়েছে। বেলাল বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
এদেশে এসেছি শুধু বাবা-মাকে ফিরে পেতে। আমি বাবা-মাকে
ছাড়া আর কারো কাছে কিছুই চাইনা।’ রাজাপুরের
সাংবাদিকরা জানান, ‘বেলালের ঘটনা শোনার পর আমরা সকলেই
আবেগ-আপ্লুত হয়ে গেছি। ওর পিতা-মাতাকে খোঁজার জন্য
সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাইকিংসহ সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে।’ রাজাপুর থানার
পরিদর্শক (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, ‘বিষয়টি অত্যন্ত
নির্মম। ইতিমধ্যে বিষয়টি ঝালকাঠি পুলিশ সুপারকে অবহিত
করেছি। বেলালের পরিবারকে খুঁজে বের করতে থানা পুলিশ
সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’ ইউএনও শাহ মোঃ রফিকুল
ইসলাম জানান, বেল্লাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের পেলে উপযুক্ত
প্রমান দিয়ে তাকে নিতে হবে। অন্যথায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের
মাধ্যমে সেভহোমে পাঠানো হবে।