রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ৪ আগস্ট সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে জামায়াত।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেলে জামায়াতের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে।
এ সময় ডিএমপি সদর দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মঙ্গলবার পহেলা আগস্ট পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা সমাবেশ করতে পারিনি। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সমাবেশ করিনি। তাই আগামী শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করার জন্য পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, আজ কর্মব্যস্ত দিন হওয়ায় সমাবেশ করলে মানুষের ভোগান্তি হবে। তাই আগামী শুক্রবার ছুটির দিনে বিকেল আড়াইটার দিকে সমাবেশ করতে চায় জামায়াত। আমরা আশা করছি পুলিশ শতভাগ সহযোগিতা করবে।
এদিকে জামায়াতের আবেদনটি ডিএমপি সদরদপ্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ শিমুল মোস্তফা গ্রহণ করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জামায়াতের প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়।
এদিন জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামীর আজকের সমাবেশ স্থগিত করে আগামী ৪ আগস্ট (শুক্রবার) রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেপ্তার সব নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কোনো দলের পক্ষ না হয়ে জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ডিএমপি কমিশনার আমাদেরকে সমাবেশ না করার জন্য মৌখিকভাবে জানানোর পাশাপাশি ডিএমপির মতিঝিল জোনের উপপুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতকে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা যদি ডিএমপির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে সমাবেশ বা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্বল্প সময়ের নোটিশে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সেই দিন একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ঐতিহাসিক সমাবেশ উপহার দিয়েছিল। যা দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়েছিল। এবারও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছি। কিন্তু সরকার আমাদের সমাবেশ করতে না দিয়ে চরম অন্যায় করেছে। আমরা আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল দাবি করে বলেন, আসলে এই সরকার স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিল করার কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে বদ্ধপরিকর। আমাদের এই দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ।