একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা রাজধানীতে করতে দেওয়া হবে না
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাঈদীর মৃত্যুতে জামায়াতের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
রাজধানীতে গায়েবানা জানাজা ঘিরে আপনাদের প্রস্তুতি কি এবং কোনো গোয়েন্দা তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকে তারা যে তাণ্ডব করলো তারপর আগামীকাল গায়েবানা জানাজা করতে দেওয়ার অনুমতি আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে না।
এদিকে সকাল ১০টার দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বহনকারী লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে (পিরোজপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন) পৌঁছেছে। ফাউন্ডেশন মসজিদের পাশে সাঈদী পারিবারিক কবরস্থানে তার কবর খনন করা হয়েছে।
দুপুর ২টায় সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে জানাজা শেষে সাঈদীকে তার বড় ছেলে মাওলানা রাফীক সাঈদীর কবরের পাশে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী।
তিনি এক বার্তায় জানান, ‘পিরোজপুরের আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে চলছে কবর খননের কাজ। এখানেই শুয়ে আছেন তার বড় সন্তান রাফীক বিন সাঈদী, তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর সাঈদী, তার বড় পুত্রবধূ সুমাইয়া রাফীক সাঈদী।’
এদিন ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং গাড়ি পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় মরদেহবাহী গাড়িটি ঘিরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা দেখা গেছে।
এর আগে ভোর ৫টার দিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ঢাকায় সাঈদীর জানাজা পড়ানোর দাবি করেন তারা। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গতকাল সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে শাহবাগ এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জড়ো হন।
তার আগে রোববার (১৩ আগস্ট) বিকালে তিনি কারাগারের ভেতরে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে রাতেই তাকে জরুরি অবস্থায় ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়।
কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকাল ৫টার দিকে তিনি বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে আটক হন সাঈদী। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।