সিলেট ভ্রমণে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আশুলিয়ার এক গার্মেন্টস কারখানার ৭ কর্মকর্তা নিহত ।
সাইদুর রহমান আশুলিয়া প্রতিনিধি : নরসিংদীর শিবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
হতাহত ব্যক্তিরা আশুলিয়ার বাইপাইল নয়াপাড়া এলাকার এসবি নিটিং নামের একটি পোশাক কারখানার কর্মী। তারা সবাই মিলে মাইক্রোবাসে করে সিলেটে ঘুরতে যাচ্ছিলেন।
হাইওয়ে পুলিশের ইটাখোলা ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন ভূইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন, টাঙ্গাইলের দেলদোয়ার থানার মীর মোতাহার হোসেনের ছেলে সবুজ মিয়া, আল আমিন মিয়া, ঝালকাঠির রাজাপুর থানার আব্দুল গণি হাওলাদারের ছেলে আল আমিন হাওলাদার, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আওয়াল, বরিশালের মুলাদী এলাকার মুজিবুর হাওলাদারের ছেলে আরিয়ান, জামালপুরের সরিষাবাড়ির দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ ও মাইক্রোবাসের চালক
নাসির হোসেন। আহতরা হলেন হলেন সাকি, পারভেজ, দোয়েল। তাৎক্ষণিক অপর আহতের পরিচয় জানা যায়নি।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, এসবি নিটিং লিমিটেড নামে ওই পোশাক কারখানার কর্মীরা গতকাল রাতে আশুলিয়া থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে সিলেটে ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। মাইক্রোটি রাত ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের ঘাসিরদিয়া নামক এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পাথর বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান। আহত হন আরও ছয়জন। পরে আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদীর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। গুরুতর আহত চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এসবি নিটিং লিমিটেডের কমার্শিয়াল ম্যানেজার আবুল হামিদ বলেন, নিহত ও আহতরা সবাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এদের মধ্যে একজন ফেব্রিক ইনচার্জ, বাকিরা সবাই মার্চেন্ডাইজার। শুক্রবার কর্মস্থল বন্ধ থাকায় আনঅফিশিয়ালভাবে বৃহস্পতিবার কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে সিলেটে ভ্রমণের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে এক লোক ফোন দিয়ে জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কিছু লোক সড়ক
দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।’
প্রত্যক্ষদর্শী মামুন পরিবহনের যাত্রী ইমরান আল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার পর আহতরা বাচার অন্য ইশারা করছিলেন। তখন তিনি কয়েকজনকে পানি পান করান এবং কালেমা পড়ান।
প্রত্যক্ষদর্শী এক অটোচালক বলেন, বৃষ্টির সময় মাইক্রোবাসটি দ্রুত গতিতে এসে ওভারটেক করতে গিয়ে হঠাৎ ট্রাকটির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খায়।
নিহত আল আমিনের বড় ভাই মো: আসিফ মিয়া বলেন, আমার বড় ভাই আশুলিয়া থেকে তার সহকর্মীদের নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে সিলেট আনন্দ ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। রাতেও আমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন আমার ভাই আর নেই।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও মাহমুদুল কবির বাশার বলেন, রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে নিয়ে আসা লোকদের মধ্যে একজন মৃত ছিল। অন্যদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতির সময় আরও একজন মারা যান। বাকি আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালে আনা মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মাইক্রোটি সামনের কোনো গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সামনে চলে আসলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। যথাযত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর কারা হবে। ট্রাকসহ চালককে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।