মোঃ রুহুল আত্রাই।
সাদা কাশ ফুল আর স্বচ্ছ নীল আকাশ। এ যেন শরতে প্রকৃতির চিরাচরিত রূপ। এই রুপে কাশ গুচ্ছ ও শিউলি ফুলের
ঘ্রাণ আর আকাশের সাদা মেঘের ভেলা সব কিছুই যেন কার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এ পৃথিবীতে যখনই
অশুরের আর্ভিভাব ঘটে তখনি আগমন ঘটে মা দেবী দুর্গার।
আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজা।
এবার আগামী ৭ অক্টোবর শুক্রবার ষষ্টি পূজার মধ্য দিয়ে শুভক্ষন শুরু তারপর ৮ অক্টোবর শনিবার সপ্তমী, ৯ অক্টোবর রবিবার
অষ্টমী, ১০ অক্টোবর সোমবার নবমী এবং ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে।
নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রতিবছর উপজেলার অর্ধশতাধিক পুজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পুজার আয়োজন করা হয়। সেই
হিসাবে পুজার চার থেকে পাঁচ মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা তৈরি কারিগরদের ব্যস্ততা। এবারও
যথাসময়ে ভক্তরা মা-দুর্গাকে বর্নিলরূপে দেখবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৃৎশিল্পীরা।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী ভবেশ চন্দ্র মালাকার বলেন, এবার প্রতিমা গুলোতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা
করছি। কোন পুজামন্ডপ কর্তৃপক্ষের যদি কোন ডিজাইন দিয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের আগেই দিয়ে দিতে
হয়। তারপর সেটা দেখে আমরা প্রতিমার ডিজাইন করি।
জামগ্রামের মৃৎশিল্পী স্বপন মালাকার বলেন, প্রথমে খড়ের বেরি দিয়ে তৈরি হয় কাঠামো। তারপর সেই কাঠামোতে
দেয়া হয় মাটির প্রলেপ এক্ষেত্রে এঁটেল মাটি ব্যবহার করেন শিল্পীরা। এরপর মাটির মূর্তিতে আঁকা হয় চোখ, নাক,
মুখ, চুলসহ হরেক রকম নকশা। তারপর প্রতিমাকে যথাযথভাবে শুকানোর পর তাতে পড়ে রঙ-তুলির আঁচড়।
বড়গাছা গ্রামের মৃৎশিল্পী নিশু মালাকার বলেন, একটি প্রতিমা তৈরিতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫দিন। একজন
কারিগরের বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর একটি প্রতিমা বিক্রয় করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
সরকারি অনুদান না থাকায় এনজিও থেকে ঋন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে । তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, যা লাভ হয় তা
দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। বাপ- দাদার পেশা না হলে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম।
আত্রাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী মধুসুধন প্রামানিক ও সাধারন সম্পাদক বরুন কুমার সরকার
বলেন, এবার উপজেলায় ৪৬টি পুজামন্ডপে দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। অন্য বছরের মতো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
সবাই নির্বিগ্নে মাকে দর্শন করবে। তবে এবার বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দীয় কমিটির আলোচনা
সভায় পুজার সময় ব্যাতীত অন্য সময় মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তি মূলক ছাড়া অন্যকোন ধরনের গান বাজানো যাবেনা
মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তিনি আরো বলেন এবারে উপজেলার কয়েকটি পুজামন্ডপ ঝুকি পূর্ন থাকলেও
আইন শৃংখলা বাহিনী সেই লক্ষে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।#