ডাক্তার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় ওষুধ। প্রেসক্রিপশনের ওজন বাড়ে। বাড়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যপত্র। এটা রোগী না বুঝলেও ফার্মেসিতে যারা প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন, ঘটনার মূল রহস্য।
সেখানে রোগীর স্বার্থ যতোটা দেখা হয়, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি। আর কমিশনের জন্য চিকিৎসকরা লেখেন পছন্দের কোম্পানির ওষুধের নাম। এভাবেই চলছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। রোগীরা ভোগান্তি পোহালেও দেখার যেন কেউ নেই।
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞও প্রেসক্রিপশন দেন বুকে ব্যথার, সাথে এক্সরে আর ইসিজির ব্যবস্থাপত্র। হাতের আঙ্গুলে ব্যথা থেকে শুরু করে যেকোনো অসুস্থতায় প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে ইউরিন টেস্ট, ব্লাড টেস্টে, আর ডায়বেটিস টেস্টের মতো বিষয়। সে সাথে আছে ব্যক্তিগত চেম্বারে আসার দাওয়াতও।
সাংবাদিক: আপনার ভিজিটিং কার্ড…।
ডাক্তার: এই নিন ভিজিটিং কার্ড। বিকেল বেলা চেম্বারে। চেম্বার গুলশানে। ওখানে পাবেন আমাকে।
প্রেসক্রিপশনে রয়েছে পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশনা, সেখানেও রয়েছে ডাক্তারদের পছন্দমতো সেন্টারেই পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা। তাই ঢাকা মেডিকেলের এই রোগীকে এক্স-রে আসতে হলো ধানমন্ডির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আর এর রহস্য ডাক্তারের ‘শতাংশের’ স্বার্থ।
রোগী: আমাদের তো কিছু করার নাই। ঠিকানা সব দিয়ে দিসে, বলছে ওখানে থেকে করিয়া আনেন। দেখা গেল একটার কথা বলছে, আমি আরেকটা থেকে করায় আনছি। পরে ডাক্তার বললো এটা ঠিক হয় নাই। আবার করে আনেন। দু’বার তিনবার করাইসে একটা কাজ। যেখানেই বলছে ওখানেই যেতে হবে। এটার মধ্যে তাদের কমিশন আসে…। ২০টা রোগী পাঠালে কমিশন…।
দোকানে যেসব প্রেসক্রিপশন যায় তার ৯০ শতাংশ প্রেসক্রিপশনেই থাকে এন্টিবায়টিকের মতো উচ্চ মাত্রার ঔষধ। আসলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ঔষধ কোম্পানি। তাই ডাক্তার বদলালে ঔষধও বদলায়।
সাংবাদিক: প্রেসক্রিপশনে এন্টবায়েটিক কি পরিমাণে দেয়া হয়?
ডিস্পেন্সরি: ৯০ ভাগ এন্টবায়েটিক থাকে।
রোগী: ভাতের থেকে বেশি খাওয়ায় ঔষধ ডাক্তাররা। কসাই গরু জবাই দিলে আল্লাহু আকবার বলে, ডাক্তাররা সেসব বলে না।
ডিস্পেন্সরি: একই ঔষধ দুই কোম্পানির দুইটা লিখেছে।
সাংবাদিক: এমন পেয়েছেন আপনারা?
ডিস্পেন্সরি: পাইছি আমরা। মাসে মনে করেন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বিষয়… যার জন্য লিখে, নয়তো একটাও লিখতো না।
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভকে সাংবাদিক: কোম্পানির সাথে কি সরাসরি ডিল করেন?
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ: হ্যাঁ… করে।
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভকে সাংবাদিক: তার মানে কোম্পানির ওপর নির্ভর করে কি লিখবে…?
চিকিৎসকের মতে, যেকোনো অসুস্থতায় হাই এন্টিবায়োটিক এতো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যে, এই ধরণের ঔষধ এখন মানুষের শরীরে কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম ডাক্তারদের পক্ষেই সাফাই দিলেন।
তবে চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসা সেবায় সরকার অনেকদূর এগিয়ে গেলেও, প্রেসক্রিপশন নিয়ে এমন বাণিজ্যে প্রশ্ন উঠতে পারে ।