কায়ছার সামির,মুন্সিগঞ্জ:
সোমবার নবমী তীথিতে দেবীর অর্চনায় মুন্সিগঞ্জ জেলার
প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নেমেছে দর্শনার্থীদের ঢল। এমনই দৃশ্য
চোখে পড়ে প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়
ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজায়। সকাল থেকেই দেবী
দুর্গার আগমনী গানে মুখরিত হয় চারদিক। সনাতন
ধার্মবম্বীদের সর্ববৃহত এই ধর্মীয় উৎসবে মন্ডপে মন্ডপে ছিল
মানুষের ঢল। পরিবার পরিজন নিয়ে মন্ডপগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন
পূর্ণার্থীরা। ঢোল আর কাশির শব্দে মুখোরিত হচ্ছে
পূজোমন্ডপ এলাকা। রং বে রংয়ের আলোর ঝলকানি মন্ডপে ভিন্ন
সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলার প্রতিটি
ম-পে ম-পে নবমী তীথিতে চন্ডীপাঠ, যজ্ঞ, চিত্রাঙ্কন
প্রতিযোগিতা, সঙ্কধ্বনি, উলু ধ্বনি, কাচ বাজানো কাশি,
হাড়ি ভাঙ্গা ও সর্বশেষ সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন ছিল।
বিহিত পূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল
দুর্গোৎসবের সূচনা। দশমী পর্যন্ত চলবে মায়ের পূজা ।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সূত্রে জানা যায়, হিন্দু
ধর্মাবলম্বীদের মতে দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরৎ কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে
আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার
ফিরে যান দেবালয়ে। দেবীপক্ষের সূচনা হয় আশ্বিন শুক্ল পক্ষের
অমাবস্যার দিন, সেদিন মহালয়া। আর দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ
দিনে কোজাগরী পূর্ণিমায়, লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে। আশ্বিন
শুক্ল পক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব চলে। পরে
বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়
দুর্গোৎসবের। একটি বছরের জন্য দুর্গতিনাশিনী দেবী ফিরে
যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে। সোমবার মহানবমী। মঙ্গলবার সকালে
দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
মুন্সিগঞ্জ জেলার মোট ২৮৩টি পূজা মন্ডপে দূর্গাপূজা
হচ্ছে। এর মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলায় ৯৬টি, শ্রীনগরে
৬৭টি, টঙ্গীবাড়িতে ৪৭, মুন্সীগঞ্জ সদরে ৩৪টি, লৌহজংয়ে
৩০টি ও গজারিয়ায় ৯টি মন্ডপে দূর্গা পূজা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
বাবু সমর ঘোষ বলেন, প্রায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী
মুন্সিগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় কালি মন্দিরে প্রতি বছর পাশ্ববর্তীদেশ
ভারতের কলকাতা থেকে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খি এই
পূজা মন্দিরে আসে। জেলার ছয়টি থানার ২৮৩টি মন্দিরের
সবকয়টি পূজা মন্দিরেই শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবেই পূজা
উদযাপন হয়। এ পর্যন্ত জেলার কোন মন্দিরে অপ্রীতিকর ঘটনার
সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম পিপিএম জানিয়েছেন,
পূজোর উৎসবকে সফল করতে নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকবে কয়েক
ধাপে। মন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় সক্রিয় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই উৎসবকে ঘিরে
প্রাচীন জনপদ মুুন্সিগঞ্জের প্রতিটি অঞ্চলে চলছে উৎসব
আমেজ।