শখের বশে অনেকে নানা ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করেন। কয়েন, ডাক টিকিট, পোস্টকার্ড, ঘড়ি, ছুরি আরো কত কী। কেউ বা আবার ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পুরনো টাকা সংগ্রহ করেন। এই শখ পূরণে কখনো কখনো সংগ্রাহককে শতগুণ পর্যন্ত বেশি ব্যয় করতে হয়।
রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে পুব দিকের সড়ক ধরে দক্ষিণ দিকে মোড় নিলে সেখানকার ফুটপাতে দেখা মেলে পর পর অন্তত ১৫ জন ব্যক্তি ছোট টুল পেতে তার ওপর বিভিন্ন মানের ছেঁড়া টাকা বিছিয়ে বসে আছেন। সঙ্গে অবশ্য নতুন টাকার বান্ডেলও আছে। আর অ্যালবামে সাজিয়ে রেখেছেন ৪০-৫০ বছর আগের পুরনো নোট। শৌখিন সংগ্রাহকরা এসব টাকা সংগ্রহ করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সংগ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে টুলের সামনের অংশে বিভিন্ন মানের নোটের ছেঁড়া অংশ গেঁথে রাখা হয়েছে। বাকি অংশে রাখা নতুন টাকা। আছে বিদেশি মুদ্রাও। পাশে গিয়ে কৌতূহল দেখালে একজন ব্যবসায়ী বলে উঠলেন, ‘কয় বান্ডেল লাগবে। ’
এই টাকা ব্যবসায়ীদের একজন খালেক মুন্সী। তিনি অ্যালবামে রাখা পুরনো টাকার নোট দেখাচ্ছিলেন এক সংগ্রাহককে। ওই অ্যালবামে ছিল ১৯৭৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বাজারে ছাড়া বেগুনি ও কমলা রঙের এক টাকার নোট। নোটের ওপরে লেখা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বাজারে বর্তমানে ওই নোট নেই। যে সংগ্রাহক ওই নোট কিনতে চাইলেন তাঁর কাছে প্রতিটি এক টাকার নোটের দাম চাওয়া হলো ১০০ টাকা। অর্থাৎ শতগুণ বেশি দাম।
এক টাকা নোটের দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে খালেক মুন্সী বলেন, ‘এসব নোট পাওয়া অনেক কঠিন। টাকার বিনিময়ে এসবের তুলনা চলে না। আপনার কাছে মনে হতে পারে বেশি দাম, কিন্তু যাঁরা পুরনো টাকা বা অন্য জিনিস সংগ্রহ করেন, তাঁদের কাছে এটি মোটেও বেশি দাম না। ’
একইভাবে ২০০৬ সালে বাজারে ছাড়া ১০০ টাকার নোটের দাম চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। ১৯৮২ সালে বাজারে ছাড়া ১০ টাকার নোটের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপ্রচলিত ও ছেঁড়া-ফাটা টাকার নোট সংগ্রহের কাজে যুক্ত আছেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। সংগ্রহ করা এসব টাকা মহাজনদের মাধ্যমে রাজধানীতে পাঠানো হয়। পুরনো নোটের সঙ্গে অপ্রচলিত নোটও পাওয়া যায়। সেগুলোই বিক্রি করা হয় ফুটপাতে। এসব টাকা সংগ্রহ করেন শৌখিন সংগ্রাহকরা।
তাহিয়াতুল ইসলাম একজন পুরনো টাকার নোট সংগ্রাহক। শান্তিনগর এলাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী তিনি। গুলিস্তানের ফুটপাতের টাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক টাকার একটি নোট কিনলেন ১০০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘শখ থেকেই আমি পুরনো টাকার নোট সংগ্রহ করি। ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সার পুরনো কয়েনও আছে আমার সংগ্রহে। যত পুরনো হবে, কদর তত বেশি। ’ তিনি বলেন, ‘এই টাকাগুলো যত্নে আমার সংগ্রহে থাকবে। আমার যখন ছেলেসন্তান হবে তখন তাদের দেখাব। তাদেরও বলে রাখব, যেন এই টাকা যত্নে সংরক্ষণ করে। আজ থেকে শত বছর পর এই নোটগুলো ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে। ’
নতুন ও পুরনো টাকার ব্যবসায়ীদের ‘ছেঁড়া-ফাটা টাকা বিনিময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি সমিতি রয়েছে। ওই সমিতির সভাপতি আল আমিন খন্দকার বলেন, ‘২০-৩০ বছর আগের টাকা যাঁরা সংগ্রহে রেখেছেন ওই নোটগুলোই বাজারে পাওয়া যায়। আবার অনেক নোট আছে, লোকজন সেগুলো ব্যাংকে জমা দেন। সেখান থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে আসে। এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই সংগ্রাহকরা কিনে নেন। এ রকম পুরনো নোট সংগ্রহের আলাদা লোক আছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই এ ধরনের লোকজন আছে।