প্রতিটি রোগীকে নিজ পরিবারের একজন সদস্য মনে করে যত্নের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি মহান ব্রত এবং আপনারা নিষ্ঠা ও মেধা প্রয়োগ করে বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। আপনাদের মধ্যে সেবাদানের মনোভাব তৈরি করতে হবে। প্রতিটি রোগীকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে সেভাবে সেবা প্রদান করতে হবে। ’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব থোরাসিক অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার সার্জনস অব এশিয়া’র (এটিসিএসএ) ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. অসিত বরণ অধিকারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এটিসিএসএ সভাপতি ডা. জেরাডো মাঞ্জো এবং মহাসচিব অধ্যাপক কামরুল হাসান বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবায় আন্তরিকভাবে মনোনিবেশের পাশাপাশি গবেষণা কাজও সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি করে হৃদরোগের মৃত্যুহার কমানো যাবে না। কেন এত বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে, কীভাবে হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়- এসব বিষয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আহ্বান জানাব চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি গবেষণার ওপর আপনারা বিশেষ গুরুত্ব দেবেন। পাশাপাশি হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য আপনাদের আরো বেশি বেশি গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা সব সুবিধা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। একের পর এক বিশেষায়িত হাসপাতাল করে দিচ্ছি। আপনারা এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে জ্ঞান অর্জন করেন, রোগীদের সর্বোত্তম সেবা দেন- এটাই আমার প্রত্যাশা।’
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি জনগণকে শুধু চিকিৎসা দিলেই চলবে না। আমাদের চিকিৎসাসেবার ওপর মানুষের আস্থা তৈরি করতে হবে- যাতে মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী না হয়।’
তবে, আগে যে হারে মানুষ বিদেশে যেত চিকিৎসার জন্য, এখন তা অনেক কমে গেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হৃদরোগের শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিগত তিন দশকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৮১ সালে প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়। ১৯৯৭ সালে যেখানে দেশে ৫০০-এর কাছাকাছি অপারেশন হয়, ২০১৫ সালে সেখানে সারা দেশে ২২টি হাসপাতালে ১০ হাজারের মতো অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের দক্ষতা ও সেবার মান অনেক বেড়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হৃদরোগের অপারেশন হলেও খুব শিগগিরই এই সেবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং খুলনায় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে চালু হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজশাহী এবং চট্টগ্রামে আরো দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অটিস্টিক শিশু শনাক্তকরণের জন্য জরিপ কার্যক্রম চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মোট ১২ হাজার ৮০৪টি আসন বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সরকারের সাড়ে সাত বছরে ১২ হাজার ৭২৮ জন সহকারী সার্জন এবং ১১৮ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দান প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিন হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নার্সদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।’