প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনই সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি, বরং বরাবরই চেয়েছে একে একটি শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল এবং মর্যাদাপূর্ণ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে।
শেখ হাসিনা আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্রবাহিনীকে কখনো আমাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বারবার ক্যু করে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিসার-সৈনিকদের হত্যা করিনি। আমরা চেয়েছি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করে একে একটি সুন্দর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে এবং এই সশস্ত্র বাহিনী যেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হয়। শুধু বাংলাদেশের জনগণের নয়, সারা বিশ্বব্যাপী আস্থা-বিশ্বাস যেন অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করেন। সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সাথে সম্মিলিত বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। যার ফলশ্রুতিতে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্ব গাঁথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।’
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীর যে সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করে গেছেন তারই ওপর দাঁড়িয়ে আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারত্ব এবং কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। সশস্ত্র বাহিনী আজ তাদের নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের নির্ভরতা অর্জন করছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ উদ্ধার তৎপরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনকল্পে সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিগঠনে বর্তমান সময়ে সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান এবং জাটকা নিধন রোধসহ বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে চলেছে। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। এসব কল্যাণমুখী ও জনহিতকর কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আমি অভিনন্দন জানাই।
আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ব দরবারে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আমাদের সরকারের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সাইপ্রাসে ফোর্স কমান্ডার, সেন্ট্রাল আফ্রিকা এবং সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডারসহ অন্যান্য মিশনগুলোতে জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদায়ন ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিহত সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের অনেক শান্তিরক্ষী শাহাদৎ বরণ করেছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই মহান দিনে আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলার জন্য তাঁর সরকার কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।