গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ঘেরা জমিতে ধান কাটা নিয়ে সাঁওতালদের শঙ্কা যেন কাটছে না। চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের ফসল তাদের বুঝিয়ে দিতে হাই কোর্টের নির্দেশের পর তাদের ধান কেটে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তবে সাঁওতালদের দাবি দাওয়া বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় তারা ধান কাটতে রাজি হচ্ছেন না।
সোমবার দুপুরে মাদারপুর গ্রামে সাঁওতালদের সঙ্গে মঙ্গলবার ধান কাটার ব্যাপারে মত বিনিময় করেন রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান।
মাদারপুর গ্রামের মিকাই মুরমু (৪৮) বলেন, এমনিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ কাটাতারের বেড়া দিয়েছে। ধান কাটলে জমি ফাঁকা হবে। তখন তারা জমি চাষ দিয়ে দখলে নিবে। তাই ধান কাটবো কিনা ভেবে দেখছি।
একই গ্রামের তেরেজা মুরমু ও শ্যামল মাড্ডি জানান, ‘চিনিকল আমাদেরকে ধান কাটতে বলছে। কিন্তু কাটতে গেলে কি হবে বুঝতে পারছি না। তাই ধানের বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় সরকার আমাদের দাবি-দাওয়া মানছে না। ধান কাটার পর তো চিনিকল ওই জমিতে আখ চাষ করবে। তখন আমাদের কি হবে।
তারা আরও বলেন, ১৬ দিন যাবৎ জমিতে পানি দিতে না পারায় অনেক ধানের জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব জমির ধান গাছ শুকিয়ে যাওয়ায় শীষ বের হচ্ছে না। আবার অনেক জমির ধান বেশি পেকে যাবার পরও কাটতে না পারায় ঝরে যাচ্ছে।
এদিকে ধান কাটার বিষয়ে রোববার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহসভাপতি ফিলিমিন বাস্কে বলেন, ধান কাটা বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
গেলো ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৩ জন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন। ঘটনার ১১ দিন পর সাঁওতালদের মামলা নেয় পুলিশ। সাঁওতালদের পক্ষে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের রামপুরা গ্রামের স্বপন মুরমু বাদী হয়ে প্রায় ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে এ মামলা করেন।