গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাগদাফার্ম ও সাহেবগঞ্জে আদিবাসীদের উপর
ন্যাক্কারজনক বর্বরোচিত হামলা-মামলা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীয় জমি
থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ও
মুখে কালোকাপড় বেধে মানববন্ধন করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর
জেলা শাখা।
গতকাল সকাল ১১টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়
আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্দ্যোগে সংবাদ সম্মেলন ও মুখে
কালোকাপড় বেধে মানববন্ধন কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়। আয়োজিত সংবাদ
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার
সভাপতি শীতল মারডি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৬ ও ৭ নভেম্বর গাইবান্ধার
সাহেবগঞ্জ ও বাগদাফার্ম এলাকার আদিবাসী ও গরীব বাঙ্গালীদের উপর রংপুর
চিনিকল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ ও ভুমিদুস্যূরা নির্দয়-নিষ্ঠুর নির্যাতন
চালায়।
এসময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন আদিবাসী শ্যামল হেমরম,রমেশ
টুডু ও মঙ্গল মার্ডি এবং গুরুত্বতর আহত হয়ে এখনো ঢাকার হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন রয়েছেন দ্বীজেন টুডু,চরন স্বরেন,বিমল কিস্কু ও মঙ্গলী হেমব্রম।
আদিবাসী ও স্থানীয় বাঙ্ধসঢ়;লীদের নিকট পাকিস্তান আমলে সরকার
অধিগ্রহনকৃত ১৮৪২ দশমিক ৩০ একর সম্পত্তি আজ চক্রান্তের মাধ্যমে
ভুমিদুস্যদের মাঝে লিজ দেয়া হচ্ছে অথচ আদিবাসীরা এর প্রকৃত হকদার হয়েও
জমি ফেরৎ পাচ্ছেন না। জমির মালিকানা চাইতে গিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন
নিপিড়ন,ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
অগ্নিসংযোগসহ হামলা-মামলা এবং হত্যাকান্ডের পর্যন্ত স্বীকার হতে হচ্ছে।
এছাড়াও রাতের আধারে পুলিশ বাহিনী মিথ্যা মামলার অজুহাতে নিরীহ বাঙ্গালী ও
আদিবাসীদের বসতবাড়ি হতে গ্রেফতার করছে।
তিনি বলেন, আদিবাসীদের ভুমি দখলের চক্রান্তের সাথে স্থানীয় এমপি,২ জন
ইউপি চেয়ারম্যান,গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে।
যে কারনে সন্ত্রাসী ভুমিদুস্যূরা অদ্যম সাহস নিয়ে অসহায় আদিবাসীদের উপর
নির্দয় হামালা চালিয়েছে। আমরা আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকার ও
দেশবাসীকে জানাতে চাই আদিবাসীদের রক্ষায় অবিলম্বে ১০ দফা বাস্তবায়ন করা
হউক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত ১০ দফা দাবী গুলোর মধ্যে রয়েছে ১/ নিহত ও
আহত আদিবাসী হত্যা ও হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠ
বিচার নিশ্চিত করতে হবে,২/ সাহেবগঞ্জ-বাগদার্ফামে সংগঠিত সকল
মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার সাথে জড়িতদেও আইনের আওতায় আনতে হবে,৩/
নিহত ও আহত ক্ষতিগ্রস্থ সকল আদিবাসী পরিবারকে ক্ষতিপুরন ও পূর্ণ
নিশ্চয়তাসহ আবারো তাদের নিজ বাসভুমে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা দিতে
হবে,৪/ আখ চাষের নামে অধিগ্রহনকৃত ১৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি আদিবাসী
ও প্রান্তিক বাঙ্গালী কৃষকদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরৎ ৫/সমতলের
আদিবাসীদেও ভুমি সংকট নিরসনে পৃথক ও সস্বাধীন ভুমি কমশিনগঠনসহ
আরো ৫ দফা বাস্তবায়ন করার জন্যে জোর দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সন্মুখ সড়কে দিনাজপুরের
বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত আদিবাসী নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা জাতীয়
আদিবাসী পরিষদের ব্যানারে মুখে কালোকাপড় বেধে দাঁড়িয়ে ঘন্টাব্যাপী
মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্যে নেতারা বলেন, আমরাও এদেশের মানুষ আমাদের
সাথে অন্যান্যদের মত মানবিক আচরন করা হউক।
বক্তারা মানববন্ধন চলাকালে বলেন, গতকাল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ৩ মাথা
মোড়ে সারাদেশের বিক্ষোভ – সমাবেশ কর্মসুচীতে অংশগ্রহন করতে যাওয়া
আদিবাসী নেতাকমী ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের পুলিশ বাধা প্রদান করেছে।
এই ঘটনায় আমরা দিনাজপুরের জাতীয় আদিবাসী পরিষদের চলমান মানবন্ধন
থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাাদ জানাই।
সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ব্লাষ্ট দিনাজপুরের সমন্বয়ক
এ্যাডঃ সিরাজুম মুনিরা,দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক গোলাম
নবী দুলাল,জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ সভাপতি রবিউল আওয়াল
খোকা,জাসদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি লিয়াকত আলী,ডেইলি ষ্টার
প্রতিনিধি কংকন কর্মকার ও কাপেং ফাউন্ডেশন ও হিউম্যান রাইটস্ধসঢ়;
এলিয়্যানস বাংলাদেশের প্রতিনিধি খোকন সুইটেন মুর্মু, জাতীয়
আদিবাসী যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং,জাতীয় আদিবাসী
পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সিবানী উরাঁও,আদিবাসী
নারী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মিনতি মারডি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ
দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আলেকজান্ডার হাঁসদা প্রমুখ।