নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেটি বিবেচনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এটি পাশ কাটালে চলবে না।’
আজ শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে আজ রাতে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের দলের কৌশল নির্ধারণ, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় সভায়।
এর আগে আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি উত্থাপন করে এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাশা করেন সাংবাদিকরা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপির ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন, ভোটের সময় হামলা-ভাঙচুর, তার পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে পেট্রলবোমা হামলা ও মানুষের প্রাণনাশের ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার আগে তাঁর (খালেদা জিয়া) তো জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। তিনি মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ একটু হিসাব করে দেখেন কত মানুষকে তিনি পুড়িয়ে মেরেছেন।’
‘ঠিক আছে, ওনার প্রস্তাব উনি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে বলুক, রাষ্ট্রপতি ভালো বুঝবেন, তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন। রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপ নেবেন সেটাই হবে। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘(প্রধানমন্ত্রী) সঠিক বলেছেন, নিঃসন্দেহে এটা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তবে আমরা আশা করি, বিষয়টিকে রাষ্ট্রপতি যেমন দেখবেন, তেমনি বড় দলের এবং সরকারি দলের প্রধান হিসেবে তাঁরও দেখার দায়িত্ব যথেষ্ট। পাশ কাটিয়ে গেলে চলবে না। এই সমস্যাকে অবশ্যই সমাধান করতে হবে। এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিব সংকট থেকে মুক্তি দিতে।’
‘বাংলাদেশে যে অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে পুরোপুরিভাবে গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের জন্যই হয়েছে। এ জন্য আগামী নির্বাচন যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিকেলে গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর মধ্য নেই। মধ্য পার হয়ে গেছে। আমরা তিন বছর পার করছি। মধ্যবর্তী যদি বলেও থাকেন, সেটা পরবর্তীর বিষয়ে বলেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্বপ্ন দেখা ভালো।’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আমরা কিন্তু কিছু বলিনি। আমরা যেটা বলেছি, সেটা হচ্ছে, যেহেতু বিগত নির্বাচনটি আমরা মনে করি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, এটা নৈতিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন নয় কোনো মতেই। এ জন্য নির্বাচনটি হওয়া দরকার। এবং সেটি দ্রুত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কখন হবে অবশ্যই সরকারি দলে যাঁরা আছেন, তাঁরা নির্ধারণ করবেন। তবে শুভস্য শিঘ্রম।’
এর আগে সকালে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করতেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।