রাজধানী ঢাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কয়েকটি প্রতারক চক্র। সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ায় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা
বেতনে চাকুরী দেয়ার নামে শত শত মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল একটি
প্রতারক চক্র, চাকুরি না দেওয়ার কারণে ঘটনা প্রকাশ হয়। অন্যদিকে বিদেশি প্রতারক চক্র কর্তৃক ‘অভিনন্দন
জানিয়ে বলা হয়, আপনি ৫ লাখ পাউন্ড এবং স্যামসাং ব্রান্ডের একটি ৫০ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন লটারিতে
জিতেছেন’।
শনিবার ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া চৌ-রাস্তায়, গোপালগঞ্জের খলিলুর রহমানের পুত্র আসরাফুল রহমান (২৫)সহ ৪-৫জন
যুবক জানায়, তাদেরকে ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দিবে বলে এক একজনের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে,
টাংগাইল জেলার গোপালপুর নলিন গ্রামের মৃত মহিউদ্দিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৪৫), গত ২ দিন আগে এই প্রতারক
চক্রের হোতা জহিরুল জামগড়া এলাকা থেকে পালিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। অনেকেই বলছে, জহিরুল ও তার সদস্যরা
জামগড়া অফিসের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে।
জানা গেছে, মুঠোফোনে এমন খবর জেনে আনন্দে আত্মহারা হয় ঢাকার বাসিন্দা বৃষ্টি। ব্রিটিশ উচ্চারণে
উইলিয়াম পরিচয়ের এক ব্যক্তি বৃষ্টিকে লটারী জেতার এই খবর দেন। সে বলেন, এগুলো আপনার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে!
শূল্ক পরিশোধ বাবদ আপনাকে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। সরল মনে বিষয়টি বিশ্বাস করেন বৃষ্টি। কাউকে না জানিয়ে তার
কথা মতো শূল্কের টাকা পরিশোধ করেন তিনি। এর পর থেকে আর খোঁজ মেলে না উইলিয়ামের। পরে বুঝতে পারেন সে
প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সুত্র জানায়,এই ভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করে নগত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশে
অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের একটি অংশ। শুধু এমন প্রতারণাই নয়, মাদক, জাল টাকা, অস্ত্র ও অবৈধ
ভিওআইপি ব্যবসা, এটিএম কার্ড জালিয়াতি, সাইবার ক্রাইমসহ নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ার হার দিন দিন
বাড়ছে এসব অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন,
ঢাকার উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিকুঞ্জ, বনানী, গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায়
সবচেয়ে বেশি বিদেশি নাগরিক বসবাস করছেন। এর সাথে শিল্প এলাকা সাভার আশুলিয়ায় নতুন নতুন কৌশলে
প্রতারক চক্র তাদের অবৈধ কারবার করছে। শুধু রাজধানীতেই ২২ থেকে প্রায় ২৫টি বিদেশি অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে।
এদের বেশিরভাগই প্রতারণার মতো অপরাধে যুক্ত।
উক্ত ব্যাপারে বিভিন্ন সুত্র জানায়, ছাত্র/ছাত্রী ও বিভিন্ন এনজিও এবং প্রকল্পে চাকরি, ব্যবসাসহ নানা ক্যাটাগরিতে
নেওয়া ভিসাধারীদের মধ্যে প্রায় ১৫ থেকে ৩০ হাজার বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে বাংলাদেশে বাস করছেন। এর বাইরে
প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক অবৈধ ভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রয়েছে।
অবৈধ এসব বিদেশিরা অপরাধ কার্যক্রমে জড়িযে পড়ার প্রবণতা বেশি। এসব বিদেশিদের মধ্যে ভারত,
পাকিস্তান,মালেশিয়া, শ্রীলংকা,ফিলিপাইন, চীন, দঃ কোরিয়া, নাইজেরিয়ান, চায়না নাগরিক বেশি। বিশেষ করে
এলিট ফোর্স র্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে ১৪৯ জন
বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান মাদক, অস্ত্র, ভারতীয় রুপি, জাল
ডলার, ভিওআইপি সরঞ্জাম ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী জব্দ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর রাজানীর বিভিন্ন
এলাকা থেকে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে মোটা অংকের লটারী পাওয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার
অভিযোগে ৭ নাইজেরিয়ানসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
অপরাধে জড়িয়ে পড়া বিদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারের জন্য তেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ
(ডিবি), গোয়েন্দা সুত্র জানায়, শুধু রাজধানী ঘিরে ২২ থেকে প্রায় ২৫টি বিদেশি অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। এদের
বেশিরভাগই প্রতারণার মতো অপরাধে যুক্ত। এসব অপরাধীরা বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে এসে আরও
বেপরোয়া হয়ে পড়ছে তারা। সুত্র জানায়, বাংলাদেশি একটি চক্র এদেরকে সহায়তা দিচ্ছে। স্থানীয় নানা বিষয়ে
সহায়তা দিয়ে দেশীয় এই চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম
সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অত্বুত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়
অপরাধী চক্র। বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে। আর
অভিনব এ অপরাধের মূলহোতা হিসেবে উঠে আসে বিদেশি নাগরিকের নাম। এর আগে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর হজরত
শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৫ কেজি সোনাসহ মালয়েশিয়ার ৩ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-১ এর
উপ-অধিনায়ক লে. কমান্ডার কাজী মোহাম্মাদ সোয়াইব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদেশি এসব নাগরিকের বেশিরভাগই
স্টুডেন্ট ভিসায় এদেশে আসে। ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধ হয়ে এক পর্যায়ে নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে
পড়েন তারা। বিভিন্ন সুত্র আরও জানায়, অনেক চীনা নাগরিক বাংলাদেশে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা
করছেন। বিষয়টি সঠিক ভাবে নজর দিলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করতে পারবে।