আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ ঠাকুরগাঁওয়ে আইন
লঙ্ঘন করে ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লার বদলে কাঠ
পোড়ানো হচ্ছে। এভাবে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন কোন
ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
দূষণে আশপাশের বাড়িঘর, ফসলি জমি, ফলের গাছ ও জনস্বাস্থ্য
মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ)
আইন, ২০১৩-এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে, জ্বালানী কাঠের ব্যবহার
নিষিদ্ধ। আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না
কেন, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি
হিসাবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করিতে পারিবেন না। যদি
কোন ব্যক্তি ধারা ৬ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া ইটভাটায় ইট
পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন, তাহা হইলে তিনি
অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা
অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
কিন্তু এসব আইন জেলার বেশির ভাগ ইটভাটা মানছেন না।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বেশিরভাগ
ইটভাটা ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায়। আর এসব ইটভাটায়
দেদারচ্ছে কয়লার বদলে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা বলেন, জেলায় মোট ৬৭টি ইটভাটা
রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১৫টি ভাটায় পরিবেশ সম্মত জিগজ্যাগ
চিমনি আছে। বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে কয়লার
সরবরাহ রয়েছে। তবে কেউ কেউ লুকিয়ে ইটভাটাগুলোতে কয়লার বদলে
কাঠ ব্যবহার করছে।
সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ি সড়কের বরুনাগাঁও এলাকার কেএমবি,
ইয়াকুবপুরের আরইউএস, আকচার এনএসবি, রুহিয়া সড়কের
ব্র্যাক অফিসের পাশে এমএবি ব্রিকস, এছাড়াও একই মালিকের
বুড়ির বাঁধ এলাকার আরেকটি এমএবি ব্রিকস, রাজাগাঁওয়ের
কেএমবি, নারগুনের এসবিএইচ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কেয়া
ব্রিকস সহ বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে কাঠের স্তুপ দেখা গেছে। আর
এসব কাঠ ভাটার চুল্লিতে ফেলছেন একদল শ্রমিক।
কেএমবি ইটভাটার শ্রমিক বকুল হাসান বলেন, তাদের ভাটায়
দৈনিক ২০০ মণ কাঠ পুড়ছে।
ওই ভাটার ট্রাকচালক মাইনুদ্দিন বলেন, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন
জায়গা থেকে তিনি ২৫০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ কেএমবি
ইটভাটায় নিয়ে আসেন। আর সে কাঠ ভাটার ইট পোড়ানোর
কাজে ব্যবহৃত হয়।
কেএমবি ব্রিকসের মালিক মুসারুল হক বলেন, কয়লা বর্তমানে
পাওয়া যায়না। তাই ভাটায় কয়লার বদরে কাঠ পোড়াচ্ছি। শুধু আমার
ভাটা নয়, জেলার সব ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
এই হিসাবে জেলার ৩-৪টি পরিবেশ সম্মত জিগজ্যাগ চিমনি
ইটভাটা বাদ দিয়ে প্রায় ৬৩টি ভাটায় দৈনিক ১২শ ৬০ মণ কাঠ
পুড়ছে বলে মনে করেন রাজাগাঁওয়ের কেএমবি ইটভাটার শ্রমিক
নজরুল ইসলাম।
ইয়াকুবপুর এলাকার ঠিকাদার রাম বাবুর আরইউএস ব্রিকস নামের
ইটভাটা। সে ইটভাটার সামনে কয়লা ও ট্রাকের টায়ার দেখা গেলেও
ভাটার ভেতরের চিত্র পুরো উল্টো। ভিতরে কাঠের স্তুপ দেখা গেছে। সে
কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানে হচ্ছে।
ভাটার মালিক রামবাবু বলেন, ইটভাটায় প্রথম রাউন্ড জ্যাম থাকে। এ
কারণেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ভাটা হিট গেলে কয়লা পোড়ানো
হবে।
এসব ইটভাটার কারণে শুধু বনই উজাড় হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ ও
কৃষিও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
কেএমবি ব্রিকসের পাশে বসবাসকারী কামাল হোসেন বলেন,
ইটভাটার কারণে জমি ফসল উৎপাদনের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।
এছাড়া ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে নির্গত বিষাক্ত কালো
ধোঁয়ায় মানুষ, পশুপাখি, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্যের ওপর বিরূপ
প্রভাব পড়ছে।
আকচা গ্রামের মাহফুজ ইসলাম বলেন, ইটভাটার ট্রাক্টরের ধুলার
কারণে শিশু সহ বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও বক্ষ্যব্যাধি ক্লিনিকের চিকিৎসক আবু মো. খয়রুল
কবীর বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় টক্সিনসহ বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত
রাসায়নিক থাকে। এ কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানান রোগে
আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, খুব
শীঘ্রই ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেয়া।