সেলিম হায়দার,তালা প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালায় ভ্যান চালক মোহাম্মদ আলী খাঁ (১৬)
হতার ঘটনায় এলাকায় ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে।
হত্যাকান্ডের প্রায় দু’মাস পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত
খুনিদের এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। তিনজন
আটক হলেও তারা নির্দোষ বলে দাবী করেছে
এলাকাবাসী।
নিহত ভ্যান চালকের পিতা তালা উপজেলার আলাদীপুর
গ্রামের মোঃ আফসার আলী খাঁ’র পুত্র মোঃ সাজ্জাদ
আলী খাঁ জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারী দুপুরে ভ্যান
নিয়ে জাতপুর হতে সুভাশিনী বাজারে যায়
মোহাম্মদ আলী। সেই থেকে তার কোন সন্ধান পাওয়া
যায়নি। ছেলের কোন সন্ধান না পেয়ে তিনি তালা
থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নং
৬১১,তারিখ ২১/০২/১৬ইং। এদিকে নিখোঁজের ২
মাস ১১ দিন পর (৩০ এপ্রিল) শিরাশুনী গ্রামের খাল
পাড় নামক স্থান থেকে ভ্যান চালক মোহাম্মদ আলী
খাঁ’র অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায়
সাজ্জাদ আলী বাদী হয়ে তালা থানায় একটি হত্যা
মামলা করেন। যার মামলা নং-১, তারিখ ০১-০৫- ১৬ ইং।
পুলিশ ৩ মে (মঙ্গলবার) পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার
সাথে জড়িত সন্দেহে তিন যুবককে আটক করে জেল-
হাজতে প্রেরণ করে। আটককৃতরা হলো তালা
উপজেলার হাতবাস গ্রামের বিমল দাশের ছেলে প্রকাশ
কুমার দাশ (২০), স্বপন দাশের ছেলে শান্ত দাশ (১৮) ও
শুভাষিণী গ্রামের ছাত্তার মোড়লের ছেলে নাজমুল হুদা
(১৯)। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে।
এদিকে সরেজমিন এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর
তথ্য পাওয়া গেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে জনৈক
ব্যক্তি জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪ টার দিকে
ভ্যান চালক মোহাম্মদ আলীকে শুভাষিণী বাজারে দেখা
যায়। পরদিন জানতে পারি সে নিঁখোজ হয়েছে।
স্থানীয় অপর এক ব্যক্তি জানান, “আমি শুনেছি যে
দিন ভ্যান চালক মোহাম্মদ আলীর লাশ পাওয়া যায় তার
বেশ কিছুদিন পূর্বে রাতে শিরাশুনি গ্রামের
মতলেব মলঙ্গীর পুত্র আক্তার হোসেন পার্শ্ববর্তী হাসেম
মলঙ্গীর পুত্র সিরাজ ও মালেক মলঙ্গীর পুত্র ইউনুস মলঙ্গীর
বাড়ী কোঁদাল আনতে যায় এবং কোথাও কোঁদাল না
পেয়ে সে ফিরে যায়। সে কি কারণে রাতে কোদাল
আনতে যায় তা নিয়ে এলাকায় ধ্রুমজাল সৃষ্টি
হয়েছে। তবে আক্তার হোসেন বলেন, এ ঘটনার সে
কিছুই জানে না। যদি কেউ এ ধরণের তথ্য দিয়ে
থাকে তবে সেটি ভিত্তিহীন। তাকে ফাঁসানোর জন্য
কোন চক্র ষড়যন্ত্র করছে। এদিকে মোহাম্মদ আলীর লাশ
উদ্ধারের পর থেকে সুভাষিণী এলাকার হাফিজুর রহমান
তুফান নামের এক ট্রাক ড্রাইভার গা ঢাকা দিয়েছে
বলে এলাকাবাসী জানায়। সে কি কারণে পলাতক
রয়েছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানান
জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে আটককৃত তিন যুবক নাজমুল হুদা, শান্ত
দাশ ও প্রকাশ কুমার দাশ এখনও জেলের ঘাটি টানছে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগি পরিবারগুলোর এ ঘটনায়
তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। নিহত মোহাম্মদ
আলীর সাথে আটককৃতদের বন্ধুত ছিল সেই সূত্রে
তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
তবে মামলার তদন্তকারী অফিসার তালা থানার উপ-
পরিদর্শক শেখ আউয়াল কবীর জানান, নিহত
মোহাম্মদ আলীর একটি সিম নাজমুলের কাছে পাওয়া
যায় সেই সূত্র ধরে নাজমুলসহ তিনজনকে আটক করা
হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ময়ন তদন্ত রিপোর্টে
মোহাম্মদ আলীকে আঘাত করে হত্যা করা হয় বলে
উল্লেখ করা হয়েছে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছগির
মিঞা জানান, ভ্যান চালক মোহাম্মদ আলী হত্যার তদন্ত
চলছে। ইতিমধ্যে তিন যুবককে সন্দেহভাজন
হিসাবে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোন নিরীহ
ব্যক্তি যাতে হয়রাণীর শিকার না হয় সে বিষয়ে পুলিশ
সচেষ্ট। এদিকে নিহত ভ্যান চালক মোহাম্মদ আলীর
স্বজনদের দাবী, কে বা কারা তাকে মোবাইল ফোনে
ডেকে নিয়ে গেল কিংবা কারা তাকে হত্যা করে
মাটি চাপা দিয়ে রাখল পুলিশ সক্রিয় হলে এর আসল
রহস্য উদঘাটন করতে পারবে। তারা বিষয়টি অধিকতর
তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।