কাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এবার প্রথম পর্বের চেয়ে তাড়াতাড়ি মোনাজাত হতে পারে।
ইজতেমার আয়োজক কমিটির অন্যতম মুরুব্বি মাওলানা মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুসল্লিদের ভোগান্তি কমাতে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গিয়াসউদ্দিন জানান, তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লির হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
আখেরি মোনাজাতে ২০ থেকে ২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। এদিকে গত পর্বের মতো এ পর্বেও বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে আসা এক মুসল্লি শুক্রবার রাতে মারা গেছেন। তাঁর নাম মো. জয়নাল আবেদীন (৭০)। তিনি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ডোমারকান্দার উত্তর সালুয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী মুন্সীর ছেলে। শুক্রবার রাতে ইজতেমা ময়দানে জয়নাল আবেদীন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে ময়দান থেকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আটজনসহ দুই পর্বে মোট নয়জন মুসল্লি মারা গেছেন।
শনিবার যাঁরা বয়ান করলেন
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে বয়ান করেন ভারতের হজরত মাওলানা মো. জমশেদ আলী। এ সময় বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আবদুল মতিন। পাশাপাশি ইংরেজি, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হয়। এ ছাড়া বাদ জোহর ভারতের মাওলানা মো. মোরসালিন, বাদ আসর ভারতের মাওলানা মো. ইউসুফ ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা সা’দ আহমেদ বয়ান করেছেন বলে জানান ইজতেমার মুরুব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন।
যা বয়ান করলেন
দুদিন ধরে ইজতেমা মাঠে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশি-বিদেশি মুরুব্বিরা তাবলিগের ছয় উছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।
বয়ানে তাবলিগের মুরুব্বিরা বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ পাকের এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার জীবন। মিছে এই দুনিয়ার আরাম-আয়েসের কথা ভুলে গিয়ে আখেরাতের কথা চিন্তা করো। দুনিয়ার জিন্দেগি ক্ষণস্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সবাইকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগির কোনো মূল্য নেই।
বয়ানে আরো বলা হয়, দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান মজবুত হয়। ইমান মজবুত হলে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়।
তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসল্লি
ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশগ্রহণেচ্ছুক মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইল মসজিদের তাবলিগের মুরুব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগের কাজে পাঠানো হবে।
বিশেষ ট্রেন
এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২৯টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে এসব ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
টঙ্গী রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্বের ২০ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত টঙ্গী থেকে জামালপুর, আখাউড়া, লাকসাম রুটসহ কয়েকটি বিশেষ ট্রেন চলবে। রোববার আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী থেকে ঢাকা, লাকসাম, আখাউড়া, ময়মনসিংহ এবং ঈশ্বরদী রুটে একাধিক বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করবে। আখেরি মোনাজাতের পরের দিন টিকেটধারী মুসল্লিরা যাতে উঠতে পারেন সে জন্য সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। এ ছাড়া ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।