জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের কোন না কোন
অংশে প্রতিদিনেই অবৈধ ভাবে মাছ ও পাখি শিকার হচ্ছে। আর
হাওরের হিজল,করছ সহ বিভিন্ন গাছ কেটে নিচ্ছে স্থানীয়
চোররা। হাওর পাড়ের বাসীন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না
থাকায় তাদের কে গাছ কাটা,মাছ ও পাখি শিকার করার উৎসাহ
প্রদান,ম্যাজিষ্ট্রেটের অভিযানের খবর অগ্রিম জানানো সহ সব
ধরনের সহযোগীতা করছে কিছু সংখ্যাক
কমিউনিটিগার্ড,আনসার সদস্য এবং স্থানীয় প্রভাবশালী
লোকজন অর্থের বিনিময়ে। তারা স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে
প্রতি নৌকা ৩শত টাকার বিনিময়ে প্রতি রাতে প্রায় ২শত
থেকে ৩শত মাছ ধরার নৌকা হাওরে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়। আর
জেলেরা কারেন্ট জাল সহ মাছ ও পাখি শিকার অন্যান্য যন্ত্রপাতি
দিয়ে নিরাপধে রাতভর মাছ ও পাখি শিকার করে। সকালে হাওর থেকে
ফিরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে চড়া দামে। হাওরে অবৈধ ভাবে
মাছ ও পাখি শিকারের খবর যখনেই পাওয়া যায় তখনেই হাওরের
দায়িত্বে থাকা ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে দ্রুত অভিযান পরিচালিত
হয়। অভিযানে মাছ ধরার জাল,নৌকা,পানি সেচার পাম্প জব্ধ করে
পুরিয়ে ও লিলামে বিক্রি আর জেলেদের আটকের পর ভ্রাম্যমান আদালত
বসিয়ে জেল ও জরিমানা দেওয়া হয়। এসবের পরও থেমে নেই মাছ ও
পাখি শিকার। এতে করে ধংশ হচ্ছে টাংগুয়ার হাওর।
জানাযায়,আর্ন্তজাতিক রামসার সাইট খ্যাত টাংগুয়ার হাওরের
১৮টি মৌজায় ৫২টি হাওরের সমন্বয়ে ৯৭২৭হেক্টর এলাকায় ৮৮টি
গ্রামে ৬১হাজার মানুষের বসবাস। এসব মানুষের মধ্যে বেশির
ভাগ লোকজনের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ফলে কর্মহীন
হাওর পাড়ের বসবাসকারীরা ৬মাসের এক ফসলী বোরো জমি চাষাবাদ
ও সারা বছর মাছ ও পাখি শিকার করেই জীবন ধারন করছে বংশ
পরমপরায়। জেলেরা রাতে শিকার করা মাছ ও পাখি সকালে স্থানীয়
বাজার ও এলাকার পাইকারদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। আর
তারা জেলেদের কাছ থেকে ক্রয় করে মাছে বরফ দিয়ে ও পাখি বস্তায়
ভড়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে জেলা সদর,ভৈরব ও
ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে করে প্রায়
মাছ ও পাখি শুন্য হয়ে পড়েছে আর এবার শীত মৌসুমে অতিথি
পাখির সংখ্যা একবারেই কম নাই বললেই চলে। আরো
জানাযায়,টাংগুয়ার হাওর কে ১৯৯৯সালে পরিবেশ সংকটাপন্ন
এলাকা হিসাবে ঘোষনা করা হয়। পরে ২০০০সালের ২০জানুয়ারী
রামসার সাইট হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ২০০৩সালের নভেম্বর থেকে
ইজারা প্রথা বাতিল করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় হাওরের জীব বৈচিত্র্য
রক্ষা ও রামসার নীতি বাস্থবায়নের উদ্যোগ নেয়। এর পরও কোন প্রকার
উন্নতি হয় নি। ১৯৯৯সালে হাওরে ১৪১প্রজাতির মাছ,২শত
প্রজাতির উদ্ভিদ,দু-শত ১৯প্রজাতির পাখি,৯৮প্রজাতির
পরাযায়ী পাখি,১২১প্রজাতির দেশিও পাখি,২২প্রজাতির পরাযায়ী
হাঁস,১৯প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী,২৯ প্রজাতির
সরীসৃপ,১১প্রজাতির উভচর প্রানী বিচরন করত ও বিভিন্ন
প্রজাতির গাছ-পালাও এসব এখন হুমকির মুখে। হাওর পাড়ের
বসবাসকারী জেলেরা জানান-আমরা বংশ পরমপরায় বর্ষায় মাছ ধরা
ও শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করে
থাকি। এছাড়া আমাদের হাওর পাড়ের বাসীন্দা ও জেলেদের বিকল্প
কোন কাজের ব্যবস্থা না থাকায় খুব কষ্টের মাঝেই
মা,বাবা,বৌ,ছেলে,মেয়ে নিয়ে জীবন যাপন করছি। সরকার
আমাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবী জানাই।
মেহেদী হাসান উজ্জল, সাদেক আলী,রফিকুল
ইসলাম,আহসানুজ্জামান শোভন,উত্তম
রায়,আশরাফুল,তুশার,অপু মুকার্জি সহ উপজেলার সচেতন হাওর
বাসীরা মনে করেন-হাওর পাড়ের বাসীন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানে
ব্যবস্থা করলে ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার-প্রচারনা ব্যবস্থা করলে
পর্যটন সমৃদ্ধ টাংগুয়ার হাওর তার ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। তা না
হলে টাংগুয়ার হাওর দিন দিন মাছ,পাখি ও গাছ-পালা শূন্য হয়ে
পড়বে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান
কামরুল বলেন-পর্যটন সমৃদ্ধ ঐতিয্যবাহী টাংগুয়ার হাওর কে রক্ষা
করা জন্য আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাতœক চেষ্টা
অব্যাহত আছে। হাওর পাড়ের প্রতিটি গ্রামে সচেতনতার সৃষ্টির
লক্ষ্যে সভা,সমাবেশ ও বিশেষ করে হাওর পাড়ের লোকজনের বিকল্প কাজের
ব্যবস্থা না হলে টাংগুয়ার হাওর তার ঐতিয্য হারাবে। আর হাওরে স্থায়ী
পুলিশ ক্যাম্প হলে মাছ ও পাখি শিকার কমে আসবে। টাংগুয়ার
হাওরের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিষ্ট্রেট জানান,টাংগুয়ার হাওরে
অবৈধ ভাবে মাছ ও পাখি শিকারের খবর পেলে দ্রুত অভিযান চালিয়ে
তা পতিহত করা হয় তা অব্যাহত থাকবে। কোন প্রকার ছাড় দেওয়া
হবে না।