সেলিম হায়দার,তালা ঃ
নদীটির নাম শালতা। এক পাড়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কাঠবুনিয়া, আরেক পাড়ে খুলনার
ডুমুরিয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রাম। মাঝখানে বয়ে গেছে এ নদী। একাংশ
মিলেছে বুড়িভদ্রার সঙ্গে আরেক অংশ মিলেছে শিবসা নদীর সঙ্গে। মাঝখানে অন্তত ১২
কিলোমিটার একেবারেই মরে গেছে। কিছু অংশ মিশে গেছে সমতল ভূমির সঙ্গে। নদীর
স্থানে উঠেছে বাড়িঘর, অন্যান্য স্থাপনা, কোথাও হয়েছে চিংড়ির ঘের। যে নদী সচল
রেখেছিল মানুষের জীবন, গ্রামে ফিরিয়ে দিয়েছিল প্রাণচাঞ্চল্য, সবুজ করে রেখেছিল
গ্রামের পর গ্রাম, বহু মানুষকে দিয়েছিল কাজের সন্ধান, সেই নদী এখন হাজারো
মানুষের অভিশাপ।
শালতা তীরবর্তী তালা ও ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে মিলিছে
নানার তথ্য। দুই উপজেলার ১৫ গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে দিন
কাটাচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কাঠবুনিয়া, বৈটেয়ারা, বাটুলতলা, মহান্দী,
বয়ারশিং, মুড়োবুনিয়া, পুটিমারী সুন্দরবুনিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ
অভিযোগ করেন, নদী ভরাট হওয়ায় তাদের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। নদী খনন করার
দাবি এলাকাবাসীর। তবে খননের আগে নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। কারণ অনেক
স্থানে নদীর চিহ্নমাত্র নেই। কেউ কেউ একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে ভরাট নদীর বুকে বাড়িঘর
তুলেছে, মাছের ঘের করেছে। খননের আগে সীমানা নির্ধারণ না হলে সংঘাতের আশংকা
রয়েছে।
ডুমুরিয়ার বৈটেয়ারা গ্রামের বাসিন্দা হিমাংশু মন্ডল (৬০) বলছিলেন, শালতা নদীর মাঝে
এখন ঘের-বাড়িঘর। কুড়ি বছর আগের অন্তত ৪০০ ফুট চওড়া নদীটি এখন একেবারেই মরে
গেছে। সরকারি ম্যাপে এই নদীর প্রশস্থ কোথাও ৪৫০ ফুট, কোথাও ৫০০ ফুট আবার
কোথাও ৪০০ ফুট। নদীর বর্তমান অবস্থা দেখে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। এই
নদীতে এক সময় স্টিমার চলতো। এখন সে দিন নেই। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে
জলাবদ্ধতা।
আন্ধারমানিক গ্রামের অধীর কুমার জোয়ার্দার (৭৮) বলেন, নদী সচল থাকাকালে এলাকায়
বেশ ধান হতো। হরকোজ ধান, বালাম ধান, পাটনাই ধানসহ বিভিন্ন জাতের ধানের
খ্যাতি ছিল দেশজোড়া। সেসব ধান হারিয়ে গেছে। মরে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। যেসব
মানুষ এলাকার কৃষিকাজে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা এখন বেকার। কিছু মানুষ
মাছের ঘেরে কাজ করতে পারলেও অনেকেই রোজগারে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বৈটেয়ারা গ্রামের ক্ষুদ্র ঘের মালিক কৃষ্ণপদ মন্ডল (৪০) বলছিলেন, নদী মরে যাওয়ার কারণে
আমরা কেউই ভালো নেই। জমিতে হালচাষের দিন শেষ হয়েছে আগেই। নিরূপায় হয়ে
অনেকে মাছের ঘের করেছে। কিন্তু ঘেরেও রয়েছে হাজারো সমস্যা। বর্ষাকালে মাঠের পর
মাঠ বৃহৎ বিলে পরিণত হয়। ঘেরের মাছ ভেসে যায়। ঘের মালিকেরা লোকসান গুনে। বড়
ঘেরের মালিকেরা কিছুটা ভালো থাকলেও ছোট ঘেরের মালিকেরা মোটা অংকের দেনায়
জড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে পাওয়া তথ্য সূত্র বলছে, সালতা মরে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বর্ষার
ছ’মাস এই এলাকার মানুষ এলাকায় কোন কাজ করতে পারেন না। এ সময় যাতায়াত
সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। স্বাভাবিক জীবনের গতি থমকে দাঁড়ায়। চিকিৎসার
ক্ষেত্রে চরম সংকট দেখা দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। রোগীকে
যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে নিতে না পারায় অনেক সময় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
জলাবদ্ধতায় দেখা দেয় বিভিন্ন ধরলেন রোগবালাই। বর্ষাকালে চিংড়ি ঘেরে কিছু
মানুষের কাজের সংস্থান হলেও তাদের মজুরি একেবারেই কম। সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫
হাজার টাকা।
কাটবুনিয়ায় সালতা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মুনসুর আলী বিশ^াস (৬৫) নদীর দিকে আঙ্গুল
তুলে বলছিলেন, ছোটবেলায় এই নদী সাঁতরে এপার থেকে ওপারে যেতে পারিনি। এখন তো
নদী আমাদের মরণ। বর্ষাকালে পুরো এলাকা ডুবে থাকে। নদী খনন না করলে এলাকার মানুষ
বাঁচবে না। অবিলম্বে নদী খনন করতে হবে। তবে খননের আগে নদীর সীমানা নির্ধারণ
করতে হবে। তা না হলে এলাকা ছেড়ে মানুষদের অন্যত্র চলে যেতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বর্ষায় গোটা এলাকা ডুবে থাকলেও শুকনোয় ঠিক উল্টো
চিত্র চোখে পড়ে। পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। দূর-দূরান্ত থেকে আনতে হয়
খাবার পানি। শুকনো মৌসুমে এইসব এলাকার মানুষেরা বর্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
কেউ মাটি কাটেন। কেউবা ঘরবাড়ি সংস্কার করেন। কেউবা অতিরিক্ত রোজগার করে
সংকটকালের জন্য কিছু খাবার মজুদের চেষ্টা করেন। বর্ষা এলেই যেন এলাকার মানুষের দু:খ
নেমে আসে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থার তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা এবং খুলনা জেলার
পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার সীমানা বিভাজন করে মাগুরখালী ইউনিয়নের
কাঞ্চননগরের ঘ্যাংরাইল নদীতে মিলিত হয়েছে। শালতা নদী থেকে ঘ্যাংরাইল নদীর দৈর্ঘ্য
প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ১০টি ইউনিয়নের ৯৪টি গ্রাম রয়েছে। নদী তীরে প্রায়
লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এরমধ্যে প্রায় আট হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। নদী ভরাটের
কারণে জেলে পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কাঞ্চননগরের ঘ্যাংরাইল নদী থেকে
উজানের কাঠবুনিয়া পর্যন্ত বর্তমান শালতা নদী সীমাবদ্ধ।
তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন জানান, জলবায়ু
পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালের নদ-নদী গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জোয়ার-
ভাটা না থাকার কারণে পলি পড়ে শালতাও ভরাট হয়ে গেছে। এ জন্য শালতা অববাহিকার জেলে
সম্প্রদায়ের মানুষ বেকার হয়ে মানবতার জীবন-যাপন করছে। এ মুহুর্তে শালতা নদী খনন না
করলে এলাকার মৎস্যজীবিসহ জীব বৈচিত্র হুমকির মূখে পড়বে।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, অনেকে মাছ ধরার পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় চলে
যাচ্ছে। আবার অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে না পেরে বিভিন্ন মৎস্য ঘেরে শ্রমিক
হিসেবে মাছ ধরছেন। এতে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের সংসার চালাতে রীতিমত
হিমসিম খেতে হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেক পরিবারের। তালা উপজেলা
সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্বে জেয়ালানলতা গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় এক হাজার
মৎস্যজীবী পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এই গ্রামের অধিকাংশ
মানুষ বেকার হয়ে অলস সময় পার করছেন। পার্শ্ববর্তী শালতা নদী ভরাট হওয়ায় তাদের হাতে
এখন কাজ নেই। একসময় নদীতে মাছ ধরেই তাদের সংসার চলতো।
শালতার সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার বিভাগীয় প্রধান
প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, খুলনার ডুমুরিয়া থেকে টিয়াবুনিয়া পর্যন্ত ৯
কিলোমিটার শালতা নদ খনন করা হবে। এতে বরাদ্দ হয়েছে ৯৩ লক্ষ টাকা। দ্রুতই টেন্ডার
আহবান করা হবে। নদের অন্যান্য অংশ খনন হবে কীনা, সে বিষয়ে কিছু জানাতে
পারেননি তিনি।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, নদীর এই অংশটুকু খন করলে সমস্যার কোন সমাধান
হবে না। একইসঙ্গে নদের মরে যাওয়া অংশ খনন করতে হবে। আর তাহলেই শালতা সচল হবে।
মানুষের সংকট মিটবে।
তালায় ডেসটিনি সোস্যাল মিডিয়া
ফোরাম ব্লুর আলোচনা সভা
তালা প্রতিনিধি
তালা উপজেলা ডেসটিনি সোস্যাল মিডিয়া ফোরাম ব্লুর
আয়োজনে রবিবার বিকালে তালা বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় হলরুমে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ডেসটিনি সোস্যাল মিডিয়া ফোরাম
ব্লুর তালা উপজলো প্রধান নির্বাহী মোঃ শফিকুল ইসলামের
সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন
ডেসটিনি সোস্যাল মিডিয়া ফোরাম ব্লুর খুলনা বিভাগীয়
সদস্য মোঃ সাব্বির ইসলাম। এ সময় প্রধান অতিথি দৈনিক
ডেসটিনি ও ডেসটিনি সোস্যাল মিডিয়ার উপজেলা কমিটির
নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে
আলোচনা করেন। তিনি এমডি ও চেয়ারম্যানের নিঃশর্ত মুক্তির
দাবিও জানান। উপ-প্রধান নির্বাহী মীর ইমরান মাহমুদ এর
পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তালা
উপজেলা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য খান আজিজুল ইসলাম,
অর্থ নির্বাহী মোঃ শাহাদাত হোসেন, দপ্তর নির্বাহী মোঃ
আজিজুল ইসলাম, উপদপ্তর নির্বাহী মোঃ কামরুজ্জামান, সদস্য
মোঃ জাফর আলী, মোছাঃ মনি সহ বহু ডিসটিবিউটার এ সময়
উপস্থিত ছিলেন।