আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছে দেখা দিতে শুরু করেছে
নতুন মৌসুমের মুকুল। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমের ফলন ভাল হবার
আশা করছেন জেলার আম চাষীরা এবং কৃষি দপ্তর। জেলা কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জেলায় এ বছর প্রায় ২৫ হাজার
হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গাছ রয়েছে ১৯ লক্ষের মত। উৎপাদনের
পরিমানের প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হবে সম্পূর্ণ মুকুলায়নের পর। দেশের
মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আম বাজারে নামে সব শেষে (নাবি ফলন)।
মাঘের শেষ (ফেব্রুয়ারীর শুরু) থেকে পুরো ফাল্গুন মাস এমনকি চৈত্র
মাসের শুরুতেও গাছে আসে মুকুল। বাজারে আম নামা শুরু হবে বৈশাখ
(মে মাস) থেকে।সরকারীভাবে ২৫ মে আম পাড়া আরম্ভ করা যাবে। পাওয়া
যাবে সেই আশ্বিন (অক্টোবর) পর্যন্ত। এ বছর পৌষ শেষের বৃষ্টিকে আম
ফলনের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিস্টরা। সদর উপজেলা
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু আল আমিন (মঙ্গলবার রাতে) জানান,
আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে রয়েছে। কিছু গাছে দেখা দিতে শুরু
করেছে মুকুল। তিনি বলেন, এ বছর প্রচুর পরিমান আগাম মুকুলের
সম্ভাবনা নেই। মুকুল যথাসময়েই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগাম
মুকুল জ্বলে যাবার (নষ্ট হয়ে যাবার) সম্ভাবনা থাকে। এখনই গাছে সেচ
বা বৃষ্টিরও খুব দরকার নেই। তবে মাঘের শেষে বৃষ্টি হলে তা ভাল ফলাফল বয়ে
আনবে। চাষীরা এখন গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। তাঁরা
কীটনাশক ও মূলত: ছত্রাকনাশক (ফাংগিসাইড) স্প্রে করছেন। কৃষি
বিভাগ কৃষকদের প্রয়েজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে। তিনি আরও বলেন,
এখনকার চাষীরা সচেতন। তারা সারা বছর ধরেই সার,সেচ আর
বালাইনাশক (পেষ্টিসাইড) দিয়ে গাছের পরিচর্যা করেন। আর আমের
ব্যাপারে এখন সরকারী ও বেসরকারী উভয় মহলই যথেষ্ট যতœশীল। সামনের
মাঘ-ফাগুনের দিন গুলিতে অতিরিক্ত কুয়াশা বা হটাৎ কোন রোগ ছড়িয়ে
না পড়লে জেলায় আমের ফলন ভাল হবে। জেলা কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউটের
সাংগঠনিক সম্পাদক রোকনুজ্জামান বলেন (মঙ্গলবার রাতে), চলতি
মৌসুমে ঠিক সময়েই গাছে মুকুল আসার কথা। আবহাওয়া ভাল
রয়েছে। দেশ সেরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ফলনের ব্যাপারে এখন
সংশ্লিস্টদের নজর যথেষ্ট। আম বিজ্ঞানীরা সারা বছর কাজ করছেন এর
বিভিন্ন দিক নিয়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম এখন বিদেশে রপ্তানী
হচ্ছে। রপ্তানীর পরিমানও দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে গাছের সংখ্যা।
গবেষনা হচ্ছে নতুন নতুন জাত, সংরক্ষন আর প্রক্রিয়াজাতের বিভিন্ন
পদ্ধতি নিয়ে। এখন আর আম উৎপাদনে ‘অন ইয়ার’ বা ‘অফ ইয়ার’ বলে
তেমন কিছু নেই। বড় প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে প্রতিবছরই আম
উৎপাদন বাড়ছে। এ মৌসুমে কৃষকেরাও আশা করছেন তেমনটি। দেশে ও
বিদেশে আমের চাহিদা প্রতিবছর বাড়ছে। বিশ্বে আম উৎপাদনে
বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭ম। দেশে উৎপন্ন ১০ লক্ষ টন পুষ্টিকর,সুস্বাদু
এ ফলের সেরা ও উল্লেখযোগ্য পরিমান অংশ উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যানপুর হটিকালচার সেন্টারের উপসহকারী
কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব জানান (বুধবার দুপুরে),এ বছর
আমের জন্য ‘অন ইয়ার’। আবহাওয়াও এখন পর্যন্ত অনুকুলে। কিছু
গাছে ফুটতে শুরু করেছে মুকুল। তাঁরা নতুন অবমূক্ত নাবি জাতের
‘গৌড়মতি’ চারা বাজারজাত করছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন আবিস্কৃত
(মিউটেশনের মাধ্যমে সৃষ্টি) ‘রাধাসুন্দরী’ নামের জাতটি নিয়েও
চলছে পরীক্ষা। শীতের শুরু সহ সারা বছর একাধিকবার ফলন হয় এই জাতে।
আরও ২/৩ মৌসুম পরীক্ষা করে বৈশিষ্ট্য টেকসই করা সম্ভব হলে অবমূক্ত করা
হবে বড় আকারের অত্যন্ত সুস্বাদু এ জাতটি। আম নিয়ে সারা বছরই
কাজ করছেন।
আব্দুর রহিম পলাশ ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ: