রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে স্কুলে যাওয়ার পথে ৫ম শ্রেণির এক স্কুল
ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে মধ্য বয়সি এক লম্পট।
ভুট্টাক্ষেতে ওৎপেতে থেকে পাষান মিয়া (৪৪) নামের ওই লম্পট ওই স্কুল
ছাত্রীকে টেনে হিচড়ে পথ থেকে ভিতরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।
এসময় শিশুটি বইখাতা ওড়না ফেলে দৌড়ে স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হয়ে ভয়ে
কাঁপতে থাকে। পরে শিক্ষকরা গিয়ে ভুট্টা ক্ষেত থেকে বইখাতা ওড়না
নিয়ে আসে। গত রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই
ঘটনা ঘটে পূর্বকাউয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দুইশ
গজ দূরে একটি ভুট্টাক্ষেতে। ঘটনার পর থেকে ওই বখাটে আর শিক্ষকের ভয়ে
শিশুটি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এদিকে ওই ঘটনার দুই দিনের মাথায় বখাটে পাষান মিয়াকে স্কুলে ডেকে
এনে গোপনে বিচারের নামে মিমাংশা করে দেয়া হয় নির্যাতিত
পরিবারের সঙ্গে। এসময় বখাটের অভিভাবক ও শিশুটির অভিভাবক উপস্থিত
ছিলেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুলের প্রধান ফজলুল হক বখাটের কাছ
থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে নির্যাতিত শিশুকে নানা ভাবে হুমকি
ধামকি দেয়। এমনকি আর যাতে এ ধরণের কোনো অভিযোগ না আসে
সেজন্য নির্যাতিত পরিবারকে শাসানো হয়। যদিও এসব অভিযোগ ও
বখাটের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রধান
শিক্ষক।
আজ বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে রৌমারী উপজেলার দুর্গম ও সীমান্ত ঘেষা
চরবোয়ালমারী গ্রামে নির্যাতিত শিশুটির বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার
বাবা মা’র সঙ্গে। এসময় শিশুটির দিনমজুর বাবা সাদেক আলী বলেন,
‘আমার মেয়ে খুবই ভয় পাইছে। এত বড় একটা ঘটনা শিক্ষকরা টাকা
খেয়ে বখাটের পক্ষ নিয়ে কোনো বিচার করল না। উল্টা আমার মেয়েকেই
ধমক দেয়, কয় তোর আর আমার স্কুলে আসার দরকার নেই। মেয়ে আমার ভয়ে
স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পরে চরবোয়ালমারী মাদ্রাসায় ভর্তি করাইয়া
দিছি।’ নির্যাতিত শিশুটি বলে, ‘ভুট্টাক্ষেতে পলাইয়া ছিল ও (পাষান)।
আমাকে টেনে হিচড়ে ক্ষেতের ভিতরে নিয়া কাপড় খুলবার কয়। আমি ভয়ে
দৌড়ে ওড়না ও বই খাতা ফেলে দৌড়ে স্কুলে যাই। স্যারগরে কইলে উল্টা
স্যাররাই আমাকে কয়(বলে) এ কথা আর কাউকে কয়ার দরকার নেই।’
পূর্ব কাউয়ারচর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা ওই
বখাটেকে স্কুলে ডেকে এনে চরথাপ্পর মেরেছি। অপরাধ স্বীকার মেয়ের
বাবার কাছে পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে বখাটে। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আর
ঘটবে না-এমন মুচলেকা দিয়েছে সেই।’ মেয়েটি ভয়ে স্কুলে আসছে
না-এমন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওটা কয়েকদিন গেলে এমনিতেই ঠিক
হয়ে যাবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাত হোসেন জানান, এ ধরণের
কোনো ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। তারপরও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা
নিব। একই ধরণের কথা বলেন রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)
এবিএম সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেয়ের পরিবার বা শিক্ষকরাও
আমাদের অবহিত করেনি।