বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ
আগামীতে যত নির্বাচন হবে সবগুলোতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত জীবনে কিছুই চাওয়ার নেই। আমি তো সবই হারিয়েছি। আপনাদের জন্যই আমি এদেশে ফিরে এসেছি। এই বাংলাদেশের জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করছি। এই দেশকে এগিয়ে নিতে আমি আমার জীবন দিয়ে উন্নয়ন করে যাবো। বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কাজ করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসাবে দেখতে চাই। এই জন্য আপনারা আগামী সব নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন এটাই আশা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় থেকেছে তখনই মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তাদের আমলে লক্ষীপুরে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারেনি। প্রায় ১৩ জন নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছিল। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে লাশের ওপরও অত্যাচার করেছিল। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল তারা। ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছিল। ২০১৩ সাল থেকে তারা আবার প্রেট্রোল বোমা মেরে ২৩১ জন মানুষকে হত্যা করে। ২ হাজারের বেশি পরিবহনে আগুন দেয়। ৫১২ টা স্কুলেও আগুন দেয়।
তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া গুলশানের এসি রুমে বসে আর তার কুলাঙ্গার পুত্র লন্ডনে বসে অর্ডার দিয়েছে আর তার দলের ক্যাডাররা মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে।
বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ৭১ সালে বাংলাদেশ ছিল একটি সদ্য স্বাধীন দেশ, যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু মাত্র সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর। জাতির পিতাকে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এরপর বাংলাদেশকে পিছিয়ে গিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে জাতির পিতা গুচ্ছ গ্রাম, আদর্শ গ্রাম প্রকল্প শুরু করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সব কাজই স্থবির হয়েছে। ২১টা বছর বাংলাদেশের মানুষ শোষিত হয়েছে। ৯৬ সালে আমরা আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ শুরু করি। আমি ৯৭ সালে ভোলার সাথে লক্ষীপুরের ফেরি চলাচল শুরু করেছিলাম।
গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি করে দেব। প্রায় দেড় লাখ মানুষকে ঘর বানিয়ে দিয়েছি। দেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। মাত্র ১০ টাকা কেজিতে ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্য দিচ্ছি। বাংলাদেশে আজ খাদ্য রপ্তানি করে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ৩৬ হাজার বিদ্যালয়কে সরকারি করেছে। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি আমরা। ৩৬ কোটি বই ১ জানুয়ারি তুলে দিয়েছি। এক কোটি ২৭ লাখ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। মায়েদের জন্য মোবাইল ফোনে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। প্রবাসীদের সঙ্গে ভিডিও কল দিয়ে তারা এখন কথা বলতে পারছেন।
তিনি আরো বলেন, অথচ বিএনপি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এতিম খানার জন্য টাকাও চুরি করে খায় তারা। হত্যা, জঙ্গিবাদ তারা তৈরি করেছে। দেশের মানুষকে তারা কিছুই দিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, লক্ষীপুরে আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। নদী ভাঙন রোধসহ আপনাদের দাবিকৃত ১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। আপনাদের দাবিকৃত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দেব।
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেন আমাদের ছেলেমেয়েরা জঙ্গি হবে? তাদের জন্য আমরা সব সুযোগ করে দিচ্ছি। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনো মানুষকে হত্যা করতে বলে নাই। হত্যা করে কতজন এখন পর্যন্ত বেহেশতে গেছে, সেটা আমার জানা নেই। মানুষ হত্যা করে কেউ বেহেসতে যায় না, দোজখে যায়।
তিনি বলেন, আমরা শান্তির দেশ গড়তে চাই। কিন্তু বিএনপি কি করেছে, শত শত কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। এমনকি কোরআন শরীফ পড়া অবস্থায় বগুড়াতে আমার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক টিংকু সভাপতিত্বে দুপুর সাড়ে ১২ টায় জনসভা আনুষ্ঠানিভাবে শুরু হয়। লক্ষীপুর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সঞ্চলনায় জনসভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, ছাত্রলীগ, সেচ্ছ্বাসেবক লীগ, যুবলীগের নেতারা বক্তব্য রেখেছেন।