গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে বিএনপির মহাসচিব
মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের আমলে বর্তমান প্রধান
নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে দেশে কোন নির্বাচনই
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। এই নির্বাচন কমিশন শুধু আওয়ামী
লীগের প্রেসক্রিপশনই বাস্তবায়ন করবেন। কেননা, প্রধান নির্বাচন
কমিশনার ছাত্রজীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা। গত নির্বাচনেও তিনি
আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা জানি দেশ থেকে ভয়াবহ জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ করতে
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। সেজন্য আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলাম।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা নাকোচ করে দিয়েছেন। বিএনপি
নেতাকর্মীদের উপর দেশে এতো হামলা, মামলা, নির্যাতন, গুম, খুনের পরেও
তারা দমে যায়নি। এই হামলা, মামলা, নির্যাতনের শৃংখল ভঙ্গ করেই বিএনপি
নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র রক্ষা এবং মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলন চালিয়ে
যাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দুরে
রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিন্তু তা এদেশের জনগণ তা কিছুতেই মেনে নেবে
না।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা সব কথা বলতে পারে না। তাদের পেছনে
চাবুক ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। সত্য কথা বললেই গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
এই কারণেই ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া
হয়েছে। শুধু ভোটই নয়, এদেশে এখন সত্য কথা, দুর্নীতির কথা বলা যায় না।
সরকারের সমালোচনা করলেই জঙ্গিবাদ ও নাশকতার সাথে জড়িয়ে মিথ্যা
মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। কোন ঘটনা ঘটলেই বলেন, জঙ্গিবাদ
নাশকতার কথা বলে তা বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ তাদের ধরে
নিয়ে যায়, তারা বলে হয় টাকা দাও নয় জেলে যাও।
তিনি উলেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়েই তাদের
নানা সুবিধা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমরা চাই তিস্তার পানি বন্টন
অবিলম্বে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক। ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি
অভিন্ন নদী রয়েছে সেসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা মানুষ চায়। তিনি
বলেন, ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নির্বিচারে সীমান্ত এলাকায়
বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু বিচার করা হোক।
শনিবার স্থানীয় পৌর শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা জেলা
বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য
রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি
আনিসুজ্জামান খান বাবু এতে সভাপতিত্ব করেন। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের
উদ্বোধন করেন রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপ-মন্ত্রী
অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। কাউন্সিলে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, অধ্যক্ষ
আব্দুল মান্নান মন্ডল, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম রঞ্জু,
রওশন আরা ফরিদ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান, মোর্শেদ হাবীব
সোহেল, ফারুক আহমেদ, আনিসুল হক, মইন প্রধান লাবু, শাহ আলম সরকার,
আব্দুল খালেক প্রমুখ।
সুদীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত এই জেলা কাউন্সিল ও সম্মেলনে জেলার সাতটি
উপজেলা ও ৩টি পৌর এলাকার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর
আগে পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা
পর্যন্ত কাউন্সিলরা গোপন ব্যালটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ রিপোর্ট
লেখা পর্যন্ত গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল গণনা
করা হচ্ছিল। উলেখ্য সভাপতি পদে সদ্য বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি
আনিসুজ্জামান খান বাবু, ডাঃ মাইনুল হাসান সাদিক ও সাধারণ
সম্পাদক অ্যাড. মিজানুর রহমান, মাহমুদুন্নবী টিটুল, অ্যাড. জিএম
মোসাদ্দেক, কামরুল হাসান সেলিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আতিক
হাসান রনি, আনিছুর রহমান নাদিম, মোশারফ হোসেন বাবু, এসএম
হুনান হক্কানী, অ্যাড. মঞ্জুর মোর্শেদ বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।