অওরীন মাহামুদ (পারভেজ) , কলাপাড়া প্রতিনিধি :
অনুকূল অবহাওয়া আর পোকার আক্রমন কম থাকায় ভাল ফলনের প্রত্যাশায় পটুয়াখালীর রবি শস্য এবং তরমুজ চাষীদের মুখে ছিল খুশীর ঝিলিক। কিন্তু চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ মার্চ লঘুচাপের প্রভাবে মৌসুমের মধ্যভাগে চার দিনের অকাল বর্ষণে প্রায় পঞ্চাশ ভাগ ফসলের ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। ক্ষেতে জমে থাকা বৃস্টির পানিতে ইতিমধ্যেই পচন ধরেছে গাছে আর ফসলে। ফলে আশানুরূপ ফলন দূরের কথা লোকসানে দেনাগ্রস্থ হওয়ার শংকায় পটুয়াখালী জেলার কয়েক হাজার কৃষক।
দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মুগডাল চাষ হয় পটুয়াখালী জেলায়। চলতি বছরে ৮৩ হাজার ৯শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে মুগডাল আবাদ করেন কৃষকরা। যা গত বছরে ছিল ৭২ হাজার ৩শ’ ১০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও ২৭ হাজার ৩শ’ হেক্টরে খেসারী, ১৯ হাজার ৩শ’ হেক্টরে ফেলন, ৮ হাজার ৯শ’ ২২ হেক্টরে মরিচ, ২ হাজার ১শ’ হেক্টরে তিল, ৫ হাজার ৬শ’ ৭ হেক্টরে চিনাবাদাম ও ১ হাজার ৭শ’ ২০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।
আবহাওয়া ও মাটি ফসলের উপযোগী হওয়া এবং স্বল্প সময়ে, অধিক লাভের কারনে জেলার গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া প্রতিবছর বাড়ছে তরমুজ চাষের জমির পরিমান এবং চাষীর সংখ্যা। চলতি বছর জেলায় ১৮ হাজার ৫৯ হেক্টর জমিতে তরমুজ চায় হয়েছে। যা বিগত বছরে ছিল ১১ হাজার ৮০০ হেক্টর। এলাকার উৎপাদিত তরমুজের গুণগতমান ভালো থাকায় দেশজুড়ে কুড়িয়েছে সুনাম। ফলে মৌসুমের এসময় বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের পদচারণায় সরগরম থাকে পুরো এলাকা।
এবার ফসলের মাঠের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারনত ফাল্গুন মাসে বৃস্টিপাত হয় না। কিন্তু চার দিনের বর্ষায় ফসলী জমিতে পানি জমে যায়। এতে নষ্ট হয়ে রবি শস্যসহ তরমুজের ক্ষেত। কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, তিনি এবার সাড়ে চার একর জমিতে বাদাম, মরিচ, মুগ এবং ফেলন চাষ করেছেন। তার সকল কৃািষ জমি এখন পানিতে তলিয়ে আছে। সেচ দিয়েও পঁচিশ ভাগ গাছ রক্ষা করা যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। একই কথা জানালেন কৃষক জয়নাল, হালিমা, ফোরকান এবং হারুন।
তরমুজ চাষী আদিবাসী রাখাইন চিংমং জানান, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় সাড়ে তিন একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। তার বোন জামাই দিয়েছেন দুই একর জমিতে। তরমুজ বের হয়েছে। ঠিক এসময়ের বৃস্টিতে তাদের অর্ধেকের বেশি জমির গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। একই কথা জানালেন কুয়কাটার খাজুরার চাষী আবুল। তাদের ভবনা এখন লাভ নয়, আসল খরচ উঠাতেই পারলেই হলো।
প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগ ক্ষতির পরিমান বিশ ভাগ বলেছে। তবে এরসাথে একমত নয় কৃষকরা। তাদের মতে ক্ষতির পরিমান অর্ধেকের বেশি। তবে পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মাতুব্বর সাগরকন্যাকে বলেন, পরিপূর্ণ ক্ষতির হিসেব বের করতে আরো ক’দিন সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে নিরূপন করা ক্ষতির পরিমান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।