আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁওঃ এখনো ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষাধিক কৃষক পায়নি
কৃষিকার্ড। আর যারা পেয়েছেন তাদের কার্ড নানা প্রলোভন দেখিয়ে দলীয়
নেতাকর্মী, ইউপি সদস্য, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও একশ্রেণির
দালালরা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে কৃষকরা সরকারের কৃষি প্রনোদনাসহ
বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম
অভিযোগ করে বলেন, গত বছর তাদের কৃষি ভর্তুকীর কথা বলে ওয়ার্ডের
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার কৃষিকার্ড গুলো নেয়। বছর পেরিয়ে
গেলেও কার্ড গুলো ফেরত দিচ্ছেনা। একই অভিযোগ ওই গ্রামের
মোয়াজ্জেমসহ শতাধিক কৃষকের।
ওই গ্রামের গ্রামপুলিশ সদস্য নগেন চন্দ্র রায় জানায়, সাবেক ইউপি
সদস্য আব্দুল জব্বার ভোটে হেরে যাওয়ার পর তার কাছে দেড়শ কার্ড জমা দেয়।
সেগুলো কৃষকদের ফেরত দেয়ার জন্য বলে। কিন্তু ওই কার্ড কৃষকদের হাতে
দেওয়ার সময় ভর্তুকীর টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি টাকা পাব কোথায়?
তাই কার্ড গুলো আমার বাড়িতেই পড়ে আছে। পাশের গ্রাম পূর্ব নারগুনের
কৃষক মজেন্দ্র নাথ রায় জানায় তার মতো অনেক কৃষক এখনো কৃষি কার্ড
পায়নি।
আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শাসলা-পিয়ালা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন
জানায়, তার এলাকার আ’লীগের এক নেতার কাছে তার কৃষি কার্ড জমা
রয়েছে। তিনি আরো জানায়, তার মতো অনেক কৃষককের কার্ড এলাকার
দালালদের হাতে আটকে আছে। স্থানীয় আ’লীগ নেতা সচীন চন্দ্র রায় বলেন,
গেল বছর এলএসডির গম সংগ্রহ অভিযানের সময় এলাকার অনেক কৃষক
কার্ড জমা দিয়ে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা নিয়েছে। এতে তারা কিছুটা
লাভবান হয়েছে।
এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের বেউর ঝাড়ী
গ্রামের ৮০টি কৃষক পরিবারের নামে এখনো ইস্যু হয়নি কৃষি কার্ড।
ওই গ্রামের সুধীর চন্দ্র পালসহ অনেকের অভিযোগ, কৃষি কার্ড না থাকায়
সরকারের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায় কৃষি কার্ড গুলো ওই ইউনিয়নের ২শ কৃষকের কৃষি
কার্ড উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানের কাছে পড়ে
আছে। তবে এ বিষয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন
কার্ডগুলো কৃষকরা এসে নিয়ে যাচ্ছেনা। একার পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে
কার্ড পৌছে দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় ২লাখ ৬৬ হাজার
৫১০টি কৃষক পরিবার। এর মধ্যে কৃষি কার্ড দেওয়া হয়েছে ১লাখ ৮২ হাজার
৯৬২ পরিবারকে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেএম মাউদুদুল
ইসলাম জানান, দালাল চক্রের হাতে কৃষি কার্ড আটকে থাকার সত্যতা পেলে
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাদের কৃষি কার্ড নেই তারা কৃষি
প্রনোদনাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম
নিবন্ধন সনদপত্র দিয়েও নিতে পারবেন ।