তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য সরকারি কাগজপত্র ও দলিল জালিয়াতির আরেক মামলায় সিলেটের বিতর্কিত ব্যবসায়ী রাগীব আলীকে আরো ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় তাঁর ছেলে আবদুল হাইসহ আরো চারজনকে ১৬ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় দেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, অন্য তিন দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন রাগীব আলীর জামাতা আবদুল কাদির, মেয়ে রুজিনা কাদির ও রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের দেওয়ান মোস্তাক মজিদ।
আইনজীবী আরো জানান, আদালত রাগীব আলীকে দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় ছয় বছরের, ৪৬৮ ধারায় ছয় বছরের, ৪২০ ধারায় এক বছরের ও ৪৭১ ধারায় আরো এক বছরের দণ্ড দিয়েছেন। অন্য চার আসামিকে দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় সাত বছরের, ৪৬৮ ধারায় সাত বছরের, ৪২০ ধারায় এক বছরের ও ৪৭১ ধারায় এক বছরের দণ্ড দিয়েছেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচার শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। কিন্তু মামলায় অভিযুক্ত রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণ দেখানোয় রায় ঘোষণা পিছিয়ে যায়।
৩০ মার্চের মধ্যে আবদুল হাইয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসককে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে প্রতিবেদন না দেওয়ায় ফের পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। সে পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল আদালতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাতে স্বাস্থ্যগত মানসিক সমস্যা ধরা পড়েনি।
প্রতিবেদন দাখিলের পর পরই উচ্চ আদালতের নির্দেশে আদালত স্থগিত করা রায় ঘোষণার নতুন দিন আজ ছিল বলে জানান অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান।
আইনজীবী আরো জানান, আজ রায় ঘোষণার আগে আবদুল হাই তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কমিটি গঠনের জন্য পুনরায় আবেদন জানালে বিচারক তা নামঞ্জুর করে দেন।
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি তারাপুর চা বাগানের ভূমি বন্দোবস্তের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলার রায় দেন একই আদালত। রায়ে রাগীব আলী ও তাঁর ছেলেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর পর পলাতক থাকাবস্থায় পত্রিকা প্রকাশের কারণে রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য একটি মামলার রায়ে রাগীব আলী ও তাঁর ছেলেকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত। বর্তমানে এসব মামলায় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন রাগীব আলী ও আবদুল হাই।
দেবোত্তর সম্পত্তির চা বাগান বন্দোবস্ত নেওয়া ও চায়ের ভূমিতে বিধিবহির্ভূত স্থাপনা করার অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দুটি করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে দেয় পুলিশ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের দুটি মামলা গত বছরের ১৯ জানুয়ারি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল এবং ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে এদিনই রাগীব আলী ও আবদুল হাই সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। ১২ নভেম্বর দেশে ফেরার পথে জকিগঞ্জ সীমান্তে আবদুল হাই ও ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে আলোচিত এ মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি রাগীব আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তারই মালিকানাধীন মালনিছড়া চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার মাহমুদ হোসেন চৌধুরী ও আবদুল মুনিম।