ঢাকা : গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের হামলা এবং অপারেশন ‘থান্ডার বোল্ট’ শেষে সেখান থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় একটি ভিডিও’র সূত্র ধরে নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা যায় তাকে নিয়ে। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ফারাজ নিজেও জঙ্গি ছিল। এই হামলার জন্যই সে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তড়িঘরি করে বাংলাদেশে এসেই বন্ধুদের সাথে নিয়ে উপস্থিত হন গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে। তবে এ ধরনের গুঞ্জনের সত্যতা মেলেনি বাংলামেইলের অনুসন্ধানে।
হিসাবটা খুবই সহজ। সন্ত্রাসীরা ওই হোটেলে যাদেরকে হত্যা করেছে তাদের বেশীর ভাগকেই গলা কেটেছে। তবে এদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রথমে গুলিও করা হয়। পরে কাছে গিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। আর জঙ্গিদের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। রোববার নিহতদের মৃতদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ময়না তদন্ত করা হয়। আর এ জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফরেনসিক বিভাগের একটি টিম নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল সিএমএইচে যান। অন্য চিকিৎসকরা হলেন- সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও কবীর সোহেল। মর্গ সহকারী হিসেবে ছিলেন রামু, ভুলু, জাহাঙ্গীর ও আজিজ।
এদের মধ্যে একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, ‘জীবনে অনেক লাশ কেটেছি, কিন্তু এই রকম লাশ কখনো দেখিনি। মানুষকে মানুষ এভাবে হত্যা করতে পারে, সেটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বেশীর ভাগ লাশেরই গলা কাটা এবং শরীরে গুলির দাগ।’
ফারাজের ময়না তদন্ত করেছেন এমন একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফারাজকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার ডান হাতে কোপের জখম এবং পিঠে স্প্লিন্টারের জখম রয়েছে।
এদিকে সোমবার বনানী কবরস্থানে ফারাজকে দাফন করা হয়। ফারাজ যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। তিনি ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লতিফুর রহমান ও শাহনাজ রহমানের দৌহিত্র এবং সিমিন হোসেন ও ওয়াকার হোসেনের ছেলে। গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। আগস্টে তার আবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ফারাজের পরিবারের এক সদস্যর বরাত দিয়ে বলা হয়, শুক্রবার রাতের হামলার পর ভোরের দিকে বন্দুকধারীরা হিজাব পরিহিত কয়েকজনকে মুক্ত করে দেয় জঙ্গিরা। ফারাজ হোসেনকেও সে সময় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় তার সঙ্গে দুই বান্ধবী ছিলেন। ওই দুই নারী বন্ধু অবশ্য পশ্চিমা পোশাক পরা ছিলেন। দুই নারীকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তারা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখানে আসার কথা জানান। এর মধ্যে অবিন্তা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলেও তিনি বাংলাদেশেরই নাগরিক।
ওই দুই নারীর জাতীয়তা জানার পর বন্দুকধারীরা তাদেরকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু ফারাজ তাদের ছেড়ে আসতে চাননি। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণেই তাকেও হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে বর্বর সন্ত্রাসী হামলায় ফারাজ আইয়াজ হোসেনসহ তিন বাংলাদেশি নিহত হন। ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকও নিহত হন।