প্লাবন গুপ্ত শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই শুরু করা হয়েছে খানাভিত্তিক তথ্য
সংগ্রহের কাজ। এতে সরকারের ২৭টি মন্ত্রণালয়ে তথ্যভান্ডার সংরক্ষণের কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, দেশের আর্থ-সামাজিক চিত্র ও
উন্নয়ন অগ্রগতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা পেতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও ক্ষুদ্র এলাকায় খানা ভিত্তিক
তথ্যভান্ডার তৈরির লক্ষ্যে সরকার এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গত ৪ এপ্রিল থেকে আগামী ২৩ এপ্রিল
পর্যন্তÍ একটি পরিবারে খানা ভিত্তিক এই তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এতে করে সরকারের
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গৃহিত সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র দুরীকরণে সহায়কসহ সেবাসমুহ দ্রুত
জনগণের দোর-গোড়ায় পৌঁছে দিতে তথ্যভান্ডার নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করবে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ের কো-অর্ডিনেটর রাজীব কুমার কর্মকার
প্রচারণা না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এই উপজেলায় ৪ জন জোনাল অফিসার, ২২ জন
সুপারভাইজার এবং ১২২ জন তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ করা হয়েছে। সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহের
কাজটি শেষ হলে একাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা সরকারীভাবে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা
সম্মানীভাতা পাবেন।
পৌরসভার দায়িত্বে থাকা জোনাল অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান বকুল বলেন, খানা ভিত্তিক
একজন ব্যক্তিকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনতে ১৫-১৬টি তথ্য দিয়ে ফরম পুরণ করতে হচ্ছে। এতে ওই
ব্যক্তির গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাইতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে প্রচারণা না থাকায় কোনো ব্যক্তি
তার তথ্য দিতে চাচ্ছে না। ফলে তথ্য সংগ্রহকারীরা অধিকাংশ বাড়িতে গিয়ে ফিরে আসছে। আবার
কাউকে পাওয়াও যাচ্ছে না। এনিয়ে অনেকের সঙ্গে বাক-বিতন্ডাও হচ্ছে।
পৌরসভার ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সুপারভাইজার মামুন ইমাম বরেন, একটি বাড়িতে তথ্য
সংগ্রহকারীরা গেলে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কেউ বলছে, আপনাদের কেন তথ্য
দিবো। সরকার তো তথ্য দিতে বলেনি। আপনারা কারা? অনেক বুঝানোর পর তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
আবার অনেক বাড়ি থেকে ফিরেও আসতে হচ্ছে।
উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহকারী লায়লা আনজুমান ফারজানা অভিযোগ
করে বলেন, আমাদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ৩দিনের
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সম্মানীভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। এ
কাজে সম্মানীভাতা কত টাকা পাবো তাও বলা হয়নি।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইনামুল হক ও খাট্টাউছনা গ্রামের বাসিন্দা তাজ বলেন,
এই কার্যক্রম শুরুর আগে কয়েকটি মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধি পরিচয়ে ১০টাকায় সিম দেওয়া
হবে বলে অনেকের ভোটার আইডি, ছবি ও আঙুলের ছাপ নেয়। তাদের নামাজের কথা বলে অপেক্ষায় রেখে
পালিয়ে যায়। এসব কারণে সাধারণ জনগণরা প্রতারিত হওয়ার ভয়ে তথ্য দিতে চাচ্ছে না। সরকারিভাবে
প্রচার-প্রচারণা চালানো হলে জনগণ শতঃস্ফুর্তভাবে তথ্য দিবে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. আহসান রেজা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, শুনেছি শুধু
প্রচারের জন্য এ খাতে কয়েক কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাকিমপুরে কোনো ধরণের
প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। একারণে আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মীরা জনগণের কাছে গিয়েও তথ্য
পাচ্ছেন না। শুমারি কার্যক্রমে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ এবং তথ্য প্রদানে জনগণকে উদ্বুদ্ব করার
জন্য প্রচারের খুব দরকার ছিল। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এতে কোনো
সদ্দুউত্তর পাওয়া যায়নি। তবে প্রশিক্ষণে সম্মানীভাতা দেওয়ার কথা উল্লেখ নাই।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার লক্ষে গত ২৩ মার্চ থেকে খানা ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের
কার্যক্রম ব্যাপকভাবে টিভি, সংবাদপত্র, পোষ্টার-ব্যানারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার জন্য
ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পায়। কিন্তু কাঙ্খিত প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি। ফলে সরকারের এই
কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। #