ঢাকা: ‘ঈদের দিন যারা মানুষ খুন করে তারা ইসলামের কেউ না’ উল্লেখ করে এদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশের সব মানুষকে সজাগ ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে গ্রাম, ইউনিয়ন, জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে এই বিপথগামীদের চিহ্নিত করে তাদের প্রতিহত করার নির্দেশ দেন।
অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্তানদের কেউ যদি বিপথগামী হয় তাহলে যেন তারা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের কথাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ছাড়াও রেডিও, টেলিভিশনসহ সকল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমে জানানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে এবাদতের সময় যারা হত্যার মিশনে যায় তাদের চেয়ে জঘন্য অপরাধী আর কেউ হতে পারে না।
নামাজ না পড়ে মানুষ খুন করা কোন ধরনের ইসলাম? ঈদের জামায়াত শুরুর আগে যারা হামলা চালায় তারা কি আদৌ মুসলামান? প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটসহ নানা প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়েছি মানুষের ব্যবহারের জন্য, তাদের কাজ সহজ করার জন্য, কোনও জঘন্য অপরাধ সম্পাদনের জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা সন্ত্রাসী তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতাকে সহজ করে দেওয়ার জন্য্ও কিছু মানুষ সম্পৃক্ত। তাদের সচেতন হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, যে চাপাতি, গ্রেনেড কিংবা অাগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে সে গুলো তাদের কেউ না কেউ সরবরাহ করছে। কেউ চাপাতি বানাচ্ছে বলেই সন্ত্রাসী তা ব্যবহার করতে পারছে। এক্ষেত্রে উৎস পর্যায়ে আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কোনওভাবেই নিরপরাধী নিরীহ মানুষকে হত্যা মেনে নেয় না। এমনকি বিধর্মীকেও খুন করার অধিকারও ইসলাম দেয়নি।
তিনি বলেন, কেউ যদি ইসলামের চোখে অপরাধী হয়ও তার বিচার শেষ বিচারের মাঠে হবে বলেই কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, এই বিচারের সুযোগ কিংবা ভার মহান আল্লাহ কারো হাতে ছেড়ে দেননি। এরপরেও যারা হত্যা করছে, এমন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারা আল্লাহর ধর্ম মানে না, রসুলকে মানে না। পবিত্র কোরআনেই বলা হয়েছে, এদের জন্য বেহশতও মিলবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজে নিয়মিত নামাজ পড়ি, কোরআন থেকে তেলওযাৎ করে দিনের কাজ শুরু করি। আমি জানি, নবী করিম (সঃ) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আপনাদের কোনও সন্তান যদি নিখোঁজ থাকে তার কথা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানিয়ে দিন। এসব ছেলেরা নিজেরাই নিজেদের লুকিয়ে ফেলে সন্ত্রাসে যোগ দিচ্ছে। তাই অভিভাবকদের বলবো, আপনারা বসে থাকবেন না।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এতদিন নিখোঁজদের গুম হয়েছে বলে তুলে ধরে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এরা নিজেরাই যোগ দিয়েছে জঙ্গিদের দলে।
শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনগুলো যদি তখনই এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারতো তাহলে সঙ্কট এতটা ঘণীভূত হতো না। আমরাও তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী আবারও উল্লেখ করেন, এই তরুণ-যুবকেরা যা করছে তা ধর্মের পথ না, মানবতার পথ না, ঘৃণ্য অপরাধের পথ। তাদের এই পথ পরিহার করতেই হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া না শিখিয়ে জঙ্গিবাদের পথে টেনে নিচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে কোনও সন্ত্রাসী ও জঙ্গির স্থান হবে না। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশ, এখানে শান্তি নিশ্চিত করতে যা কিছু করণীয় তা করবো।
রাজধানীর গুলশানে রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে জঙ্গিদের প্রতিহত করতে পেরেছি। জিম্মিদের মধ্যে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করতেও পেরেছি।
এই ধরনের জঙ্গিদের প্রতিহত করতে দেশের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে তাদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোথায় কে বিপথে যাচ্ছে, নিজ এলাকায় কে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করুন, ব্যবস্থা নিন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই জঙ্গি বা সন্ত্রাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে বলেও এসময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখ হয়, যখন দিন রাত পরিশ্রম করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, যখন দেশ অগ্রগতির পথে তখন এমন সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে হেয় করার এমন ঘৃণ্য অপচেষ্টা চলছে।
দেশের মানুষকে সচেতন থাকতে ও নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন বিশ্বাস রাখুন এই অবস্থার পরিবর্তন হবেই।
ঈদের দিনে যারা মানুষ খুন করে এরা ইসলামের কেউ নয়, পরকালে এদের ঠাঁই বেহেশতেও হবে না, এমনটাই কোরআনের বিধান, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি আমার মা-বাবা-ভাইদের সবাইকে হারিয়েছি। এখন আর হারাবার কিছু নেই। দেশের মানুষকে ভালোবেসে কাজ করে যাওয়াই আমার লক্ষ্য।
ঈদের দিনটি সবার ভালো কাটুক এই কামনা করে, দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।