অনলাইন ডেস্কঃ
দুই দফায় অভিযান চালিয়েও রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে আজ বুধবার আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খাঁন কামাল।
বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানিয়ে গত ২৮ মার্চ দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফ নামের তিন যুবক। ওই ঘটনার মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের গুলশানের বাসায় সোমবার এবং মঙ্গলবার অভিযান চালায় পুলিশ। তবে এসময় সাফাতকে ওই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মামলাটি তদন্তভার আজ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, আসামি যেই হোক তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে খোঁজা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই তাকে ধরে ফেলব। আইন সবার জন্যই সমান। আমরা সেই আইনকে শ্রদ্ধা করি। যে-ই অন্যায় করে থাকে তার বিচার অবশ্যই হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ব্যবস্থা অবশ্যই নেবে। আপনারা ধৈর্য্য ধরেন।’
গত ৬ মে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজন বনানী থানায় মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় পাঁচজনকে। তারা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিব, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। আসামি সাদমান সাকিবকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সাফাতের জন্মদিনে দুই ছাত্রী যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী (অজ্ঞাতপরিচয়) তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তাঁর বান্ধবী জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তাঁরা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিলেন। বাদী ও বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তাঁরা চলে যেতে চান। এই সময় আসামিরা তাঁদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তাঁকে খুব মারধর করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন এবং তিনি প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় দেহরক্ষী পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তাঁরা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা তাঁরা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এতে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।