হেলাল শেখ-বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
সারা দেশের যেখানে-সেখানে ক্লিনিক, ডাইগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসি-ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধে বাজার
সয়রাব। ফার্মেসি দোকান থেকে মানুষ ওষুুধ ক্রয় করেন রোগ ভালো হওয়ার জন্য কিন্তু রোগ ভালো হওয়াতো দুরের কথা,
অনেক সময় উল্টো সমস্যায় বিপাকে পড়েন রোগীরা। অর্থের বিনিময় ওষুধ কিনে সেই ওষুধ সেবনের পরও যদি
মানুষের রোগ ভালো না হয়, তাহলে মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাবে কোথায়? এ যেন দেখার কেউ নেই।
বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার মিরপুর ও সাভার আশুলিয়াসহ সারা দেশের যেখানে-সেখানে অনুমোদন বিহীন ক্লিনিক
ও ডায়গনস্টিক সেন্টার এবং নিয়ন্ত্রণহীন ফার্মেসি ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে।“ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধে
বাজার সয়লাব” নামিদামি হাসপাতালগুলোর ফার্মেসিতেও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের
অর্র্ধেকেরও বেশি পরিদর্শনের বাইরে। দেখা যায়, পান-সুপারি ও মুদি দোকান সহ যেখানে-সেখানে রাস্তার পাশ্বে
টেবিল বসিয়ে ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ বিক্রি করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গ্রামে বা জেলা শহরের বেশিরভাগ ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফার্মেসির লাইসেন্স
নেই, আর যাদের লাইসেন্স আছে-তারা প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করছেন লাইসেন্সের শর্ত। বেআইনি ভাবে ওষুধ বিক্রি করছে
অনেকেই। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও সংবাদদাতাদের তথ্যমতে জানা গেছে, সারা দেশে কথিপয় ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক
রোগীদেরকে জিম্মি করে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করার অভিযোগও রয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু ওষুধের দোকানদার
কৌশলে ফার্মেসি মালিকদেরকে নিয়ে সমিতি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওষুধ ক্রয়-বিক্র করার তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ওষুধের সুনাম থাকলেও দেশজুড়ে চলছে ওষুধ বাণিজ্যে সীমাহীন নৈরাজ্য। অন্যদিকে নকল,
ভেজাল, নি¤œমানের ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন অনেক রোগী।
দেখা যায়, ক্লিনিক ও ডায়গনসিস্টক সেন্টারে সেবার নামে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টসহ বাড়তি টেস্ট করানো
হয়। সারা দেশে প্রায় ৬৪ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নামে বে-নামে কথিপয় ডাক্তার, উপজেলা ও জেলা শহরের ক্লিনিকে
রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন। আর সেইসব রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্লিনিক
মালিকের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন বেশিরভাগ ডাক্তারগণ। জানা গেছে, এসএসসি পাস করেও অনেকেই
ডাক্তার বনে গেছেন, তারা অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন চিকিৎসা পেশায়।
০১/০৬/ ২০১৭ ইং এ বিষয়ে ইসরাত (২৫) নামের একজন নারী বলেন, আমার মাথা ব্যথার জন্য আগে যে ওষুধ সেবন
করতাম কিন্তু বর্তমানে সেই ওষুধে কাজ করছে না, আমার জানা মতে আরও কয়েকজন বিভিন্ন রোগের ওষুধ সেবন
করেন কিন্তু তেমন কাজ হচ্ছে না বর্তমানে মনে হয় প্রায় সব ওষুধই ভেজাল। এরকম অনেকেই বলেন, যেকোনো
রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে সেবা নিতে গেলেই-ব্যবস্থাপত্রে কসাইয়ের মতো ৬ থেকে ৭ রকমের ওষুধ লিখে দেন ডাক্তার
এবং নানারকম টেস্ট দিয়ে ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন, এতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশলমাত্র তাদের।
রোগীরা জানান, আমরা কিভাবে জানবো যে, কোন ওষুধ ভেজাল ও নি¤œমানের? পুলিশ প্রশাসন ও ভ্রাম্যমান আদালতের
মাধ্যমে এসব ভেজাল, নি¤œমানের ওষুধ প্রস্তুতকারক ও ওষুধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত
ব্যবস্থা নেয়া হলে প্রতারণার হাত থেকে মানুষ বাঁচবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
উক্ত বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আনরেজিস্টার্ড,
মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে সারা দেশের ফার্মেসিগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন ওষুধ
প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে
৫টি অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের পাশাপাশি র্যাব, এপিবিএন ও জেলা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও ওষধের
দোকানে অভিযান চালাচ্ছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর তথ্যে জানা গেছে, সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধের দোকান
(ফার্মেসি) রয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৩টি। অনেকেই বলেন, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এই ওষুধের ব্যাপারে আররও
অনেক তথ্য আছে, যা লিখতে গেলে ইতিহাস হবে। আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের সকলকে সচেতন হওয়াটা জরুরী
হয়ে পড়েছে। সবাই সচেতন হলে সব সমস্যার সমাধান হবে হয়ত।