অনলাইন ডেস্কঃ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানিয়েছে, জঙ্গিবাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী অডিও-ভিডিও, তথ্যচিত্র এবং বিভিন্ন ভাষার বই থেকে অনুবাদ করার জন্য নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের একটি কমিটি রয়েছে, যার নাম শরিয়া বোর্ড।
আজ সোমবার বিকেলে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান।
মুফতি মাহমুদ জানান, র্যাবের অভিযানে গতকাল ইমরান আহমেদ নামের জেএমবির দাওয়াত বিষয়ক কমিটির একজন সুরা সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাওয়া যায়, সারোয়ার-তামিম গ্রুপ মোটিভেশনের জন্য যেসব অডিও-ভিডিও, তথ্যচিত্র, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট যেসব বই আছে তা বিভিন্ন ভাষার। সে বইগুলোকে অনুবাদ করে তা বিতরণের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে, তারাই শরিয়া বোর্ড নামে পরিচিত।
র্যাব আরো জানায়, ২০১৫ সালে এই শরিয়া বোর্ড গঠিত হয়। আর শায়েখ মামুনুর রশীদ মামুন (৩২) বর্তমানে সেই শরিয়া বোর্ডের আমির। বিভিন্ন সময়ে আটক করা জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে মামুনুর রশীদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং অনেকবার সাক্ষাৎও হয়েছিল। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আজ ভোরে র্যাব-১১ একটি অভিযান পরিচালনা করে। র্যাবের অভিযানে মামুনুর রশীদ মামুনকে ঢাকার ডেমরা এলাকা হরকাতুল হিকমা ওমর ফারুক মাদ্রাসা থেকে আটক করা হয়। তিনি এই মাদ্রাসায় ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত।
তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। তিনি ২০০৩ সালে দাওরা পড়াশুনা শেষ করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারতের উত্তর প্রদেশের দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন এবং হাদিস গবেষণা বিষয়ে বিস্তার জ্ঞান লাভ করেন। তিনি একজন কোরআনের হাফেজ। তাঁর মূল দক্ষতা হচ্ছে যে বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে পারা।
মুফতি মাহমুদ আরো জানান, এর আগে মামুনুর রশীদ অনেক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে সায়েদাবাদে বায়তুন নুর মাদ্রাসায় প্রায় সাত বছর শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৪ সালে জঙ্গিবাদের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।
তৌহিদ এবং ইমাম নামের দুই ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি জেএমবিতে যোগদান করেছেন বলে জানান। আর ২০১৫ সালের দিকে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শরিয়া বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর দক্ষতার মাধ্যমে তিনি ২০১৬ সালে শরিয়া বোর্ডের আমির হিসেবে নির্বাচিত হন।
এ বোর্ডের মূলত ১০ থেকে ১৫ সদস্য থাকেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে জঙ্গিভিত্তিক লেখা, বই ইত্যাদি সংগ্রহ করতেন। আর এ কাজের জন্য জাহিদ এবং তৌহিদ নামের দুজন সহায়তা করতেন। বিভিন্ন বই থেকে অনুবাদ করে তারা বিভিন্ন ধরনের অডিও-ভিডিও তৈরি করতেন এবং তা সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রকমের ইসলামি আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্যে তাঁরা সুযোগ বুঝে এসব উগ্রবাদী জিনিসগুলো ছড়িয়ে দিতেন। মামুনুর রশীদের সঙ্গে জেএমবির সমন্বয়কারী সাজিদের ভালো ঘনিষ্ঠতা আছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
মুফতি মাহমুদ বলেন, মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা চলমান আছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো অনেক কিছু জানা যাবে।