অনলাইন ডেস্কঃ
লুটপাটের জন্যই বিশাল ঘাটতির এ বাজেট পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, গরিব মারার এ বাজেট অলীক এবং জনগণকে ধোঁকাবাজির শামিল।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। আজ ভোটারবিহীন সরকারের সংসদে নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে এ বাজেট পাস করা হয়। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বাজেট পেশ করেন। বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি এক লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে বলেছেন ভিক্ষা অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে তারা বেরিয়ে এসেছেন। তারা নাকি নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা নির্মাণ করেছেন। অথচ এবারই বাজেটের ঘাটতি মোকাবিলায় বিদেশি ঋণ ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা আর অনুদান হিসেবে পাঁচ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বলে বাজেটে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ হ্রাস পেতে পারে এবং সুদ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। এতে প্রতীয়মান হয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ভাওতাবাজি। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে টাকা ধরা হয়েছে তার মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। আজকেই অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। যা সমস্ত অর্থনীতিকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাজেটের ঘাটতি মেটানো বন্যাপ্রবণ নদীর তীরে বালির বাঁধ নির্মাণের শামিল। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, নিজের পায়ে নাকি বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে। ভয়ংকর আর্থিক নৈরাজ্যের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়ে যাঁরা পার্শ্ববর্তী দেশের মাটিতে পা রেখে চলেন, তাঁরা নিজের দেশকে কতটুকু নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে সক্ষম করে তুলেছেন তা দেশবাসী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘মূলত লুটপাটের জন্যই বিশাল ঘাটতির এ বাজেট পাস করা হয়েছে। উন্নয়ন খাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তার বেশির ভাগই লুটপাট হয়। আগামী ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দলের লুটের বাজেট সংসদে পাস হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে রাজস্ব আয়নির্ভর বাজেট হলো গরিব মারার বাজেট। কারণ রাজস্ব আয় যেসব খাত থেকে ধরা হয়েছে তা গরিবের পকেট কেটেই আদায় করা হবে। আবার বাজেটে যে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি দেখানো হয়েছে, তা পূরণ করা অসম্ভব। বাজেটে যে কাল্পনিক প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, তাও বাস্তবসম্মত নয়। বিশ্বব্যাংক বিষয়টি নিয়ে আগেই বলেছে, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কাল্পনিক যা বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। সুতরাং এক কথায় বলা যায়, গরিব মারার এ বিশাল ঘাটতির বাজেট অলীক এবং জনগণকে ধোঁকাবাজির শামিল।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা কতটা গণতান্ত্রিক যে, নিজ দলের এমপিরাও অর্থমন্ত্রীকে ছাড় দেয়নি।’ এ প্রসঙ্গে আমাদের আর বলার কিছু নাই। তামাশা দেখতে ভালোই লাগে। তবে চক্ষুলজ্জাহীন তামাশা মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে। ক্ষমতাসীনদের অভিনয় দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত, হতবাক। যেন যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্ট বেটাই চোর। গিন্নির যেন কোনো দায় নেই। অর্থমন্ত্রীকে কেষ্ট বানিয়ে বাজেট নাটকটি দক্ষ পরিচালনার অভাবে জনগণের কাছে হাস্যপদ নাটকে পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে নিজ দলের এমপিদের কটুবাক্য বর্ষণকে প্রধানমন্ত্রী উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলে তা হবে পাতানো একতরফা নির্বাচনে গঠিত ভোটারবিহীন সরকারের পাতানো গণতন্ত্র। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাজেট অনুমতি পাওয়ার সময় ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা যদি প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর সমালোচনা করতেন, তাহলে বোঝা যেত আওয়ামী গণতন্ত্রের ওজন কতটুকু।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মনে হয় সরকার আবারও যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় আসার খায়েশ পোষণ করছে এবং ক্ষমতায় এসে পুনরায় সে আইনটি চালু করে জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে বলে মনে হয়। এ আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত করা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী। আজকে যে বাজেট পাস হলো সেটি গণবিরোধী, উদ্ভট তামাশা, জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করা, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও জনগণের পকেট কাটার বাজেট। আমরা এ প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’