অনলাইন ডেস্ক:
দেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ বেশ কিছু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওইসব নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
আজ শনিবার সকালে গাইবান্ধা থেকে আমাদের প্রতিনিধি কৃষ্ণ কুমার চাকী জানান, তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘটসহ গাইবান্ধার সব নদীর পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কঞ্চিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আকবর মিয়া জানান, দুদিনে তাঁর এলাকার কয়েকটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে কোচখালীসহ ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ও গুণভরি এলাকায়।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানির হাঁসধরা, কড়াইবাড়ি, রায়দাসবাড়ি, কীর্তনের পাড়া, সৈয়দপুর ও ফুলছড়ি উপজেলার চর কালাসোনা, খলাইহারা, বালাসীঘাট, সুন্দরগঞ্জের লাল চামার, বেলকার চরসহ ২২ গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তা অথবা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বালাসীঘাট থেকে উড়িয়া পর্যন্ত সড়কটি।
এ দিকে বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখানে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার মাত্র পাঁচ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। পানি বাড়তে থাকায় আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত আড়াই শতাধিক চরগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের প্রায় এক লাখ মানুষ। এক হাজারেও বেশি মানুষ বাঁধ, উঁচু রাস্তা ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে পাট ও সবজি ক্ষেতের। অন্তত ২০টি স্পটে ভাঙন তীব্ররূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গৃহহীন হয়েছে আরো ৫০টি পরিবার।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীতে ছয় সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ছয় সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে নয় সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
বাসস অন্য একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বগুড়ায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে সারিয়াকান্দি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত পরিবারগুলো খাদ্য বাসস্থান বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছে।
দুর্গত লোকজন জানিয়েছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা, কতুবপুর ও কামালপুর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের পানিবন্দি মানুষ এখন নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বাঁধে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানি প্রবেশ করায় ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাইস্কুল ও একটি মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, বানভাসীদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন এবং ধুনট উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।