বাংলার প্রতিদিন ডেস্কঃ
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আরো যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগকে আরেক টার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় এলে লুটপাট করে, দেশের উন্নয়ন করে না।’
আজ শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন- গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একথা বলেন।
সভায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করবে এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করি, ২০১০ থেকে ২০২০। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। আমি চাই, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে এই জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। তখন নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের উন্নয়ন, মানুষের উন্নয়ন। এর বাইরে যখনই যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে দেশে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণ কীভাবে, কাকে চায়।
সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে জনগণ উন্নয়নের সুফল পায় না মন্তব্য করে টানা দুই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জানে, এটা প্রমাণিত। এটা মাথায় রেখে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে যেসব কাজ হাতে নিয়েছি সেসব বাস্তবায়ন করেছি। যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আরো এক টার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আমরা এ বছর দেশের সর্ববৃহৎ বাজেট দিয়েছি, এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামীতে আরো বড় বাজেট দিতে পারব।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জনসংযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন এলেই বিএনপি নানারকম টালবাহানা শুরু করে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনে যায়নি, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু জনগণ যাতে ভোট দিতে না পারে সে জন্য মানুষ হত্যা করেছিল। তার আগে ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়েছিল। তারা যে মানুষ হত্যা করেছে পুড়িয়ে, নিশ্চয়ই সেটা বাংলাদেশের জনগণ ভুলে যায়নি, ভুলে যাবে না। কাজেই এরা ক্ষমতায় থেকে লুটপাট-দুর্নীতি করে, তাদের আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, নিশ্চয় এটা ভুলে যায়নি জনগণ। কাজেই জনগণের কাছে সেই কথাগুলো তুলে ধরতে হবে।’
প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি একাধিকবার বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। ওই সব নির্যাতনের চিত্র তিনি সারা দেশে নেতাকর্মীদের প্রচার করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘আমি বুঝি না আমাদের নেতাকর্মী কীভাবে বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ভুলে যায়। আমাদের নেতাকর্মীরা হয়তো উদার, তারা মনে হয় সব ভুলে গিয়েছে।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা যে অত্যাচার করেছে আমরা তার কিছুই করিনি। আমরা তো প্রতিশোধও নেইনি। তারপরও তারা থেমে থাকেনি। নির্বাচন ঠেকানোর নামে সারা দেশে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। আর ক্ষমতায় থাকতে এমন কোনো জেলা বাকি নাই যে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার হয়নি, খুন করেনি। আমার উপস্থিতিতে আমাদের অফিসে পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় আমাদের দলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান-সিআরআই সিলগালা করে দিয়েছিল। আমার বাসায়ও কয়েকবার হামলা করেছে। আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অফিসে তো সব সময় ব্যারিকেড দেওয়াই থাকত। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উদার বলেই হয়তো অতীত ভুলে যান। আর বুদ্ধিজীবীরাও এগুলো ভুলে যান।’
বিএনপি আমলে সারা দেশে যত জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের সবার তালিকা তৈরি করার জন্য শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এগুলোর আর্কাইভ থাকা উচিত। সবার জানা দরকার। অতীত ভুলে যাওয়া উচিত না। অতীত ভুলে গেলে এগুনো যায় না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন সততার অভাবে কোর্টে হাজিরা দিতে যান না অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সততার শক্তি থাকলে তো কোর্টে যেতে ভয় পাওয়ার কথা না। আমার নামে মামলা হয়েছে, আমি তো ভয়ে লুকাইনি। আর উনি মামলার ভয়ে কোর্টে যান না।’
আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাসী মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘জনগণ ভোটের মালিক, জনগণ ভোট দেবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এই স্লোগান কিন্তু প্রথম আমরাই শুরু করেছি। আমরা সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাসী। নির্বাচন চেয়েছি।’ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান দেশের নির্বাচনীব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করেন বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। তারপরও দলটি টিকে আছে। আর দেশের সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। আজকে দেশে মঙ্গা নাই, খাদ্যের অভাব নাই, ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি আমরা। দেশের উন্নয়নের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। শোকের মাস আগস্টের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঠিক করাসহ বেশ কয়েকটি জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হতে পারে এ বৈঠকে।