বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ,
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ গণমাধ্যমবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবিতে আজ রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে সাংবাদিকদের ‘রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি’ পালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রার্ড সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি নিয়ে অবিলম্বে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন, বন্ধ গণমাধ্যম অনতিবিলম্বে খুলে দেওয়া, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং সাংবাদিক নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
কর্মসূচিতে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা আগস্ট মাসের মধ্যে ৫৭ ধারা বাতিল ও এই কালো আইনে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। শুধু তথ্যমন্ত্রী নয়, তাঁকে নিয়োগকারীদেরও বিদায় নিতে হবে।
বর্তমান সরকারকে গণমাধ্যমের শত্রু সরকার হিসেবে অভিহিত করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
আজ রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাতের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসিন, বিএফইউজের সাবেক সহসভাপতি নূরুল আমীন রোকন, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিইউজের সহসভাপতি খুরশিদ আলম, দিগন্ত টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক জিয়াউল কবীর সুমন, সাংবাদিক নেতা আবুল কালাম মানিক, এরফানুল হক নাহিদ, শাহজাহান সাজু, শাখাওয়াত ইবনে মইন চৌধুরী, ডিএম আমিরুল ইসলাম অমর, এইচ এম আল-আমিন, জসিম মেহেদী, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বগুড়া, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুরসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বিএফইউজের অঙ্গ ইউনিয়নগুলো একই সময়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করেছে।
বিএফইউজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।
ঢাকার অবস্থান কর্মসূচিতে মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও কালো আইন বাতিলের জন্য আবেদন-নিবেদন করে কোনো লাভ হবে না।
গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকে না। ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে ফ্যাসীবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। তার পরই ৫৭ ধারাসহ সব কালাকানুন বাতিল করা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় প্রথম ২০১২ সালে মামলা হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে। সেই মামলায় আমি তিন বছরের বেশি জেল খেটে এসেছি। প্রেসে তালা দিয়ে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরেও মামলায় অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ। কারণ আমরা যে স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করেছি তা সঠিক ছিল।’
শওকত মাহমুদ বলেন, ৫৭ ধারা বাতিল করতে যদি সংসদ অধিবেশনের জন্য সময় লাগে তাহলে এখনই বাতিলের ঘোষণা দিতে হবে। এ আইনে মামলা করা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। যদি সরকার এ আইন বাতিল না করে এমন সময় আসবে যখন বর্তমান সরকারের মন্ত্রিদের এ আইনে জেলে যেতে হবে। তিনি বলেন, ৫৭ ধারায় যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে তার সব প্রচলিত আইনেই আছে। ফৌজদারি আইনে সেসব অপরাধ জামিনযোগ্য এবং সাজা অনেক কম। একই অপরাধে দুই ধরনের আইন থাকতে পারে না। দেশে যখন অবৈধ সরকার থাকে তখন তারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরনের কালাকানুন তৈরি করে।
শওকত মাহমুদ আগস্ট মাসের মধ্যেই নিবন্ধিত সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি নিয়ে নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন এবং বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে অচিরেই বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং সে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, এই ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় বসে আমার দেশসহ অসংখ মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একটি সাংবাদিক হত্যারও বিচার হয়নি। প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এই সরকারের অনেক উন্নয়ন আমরা দেখেছি। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে দেশ তলিয়ে যায়। এটা কিসের উন্নয়ন? সারা দেশে যেভাবে ধর্ষণের উন্নয়ন হচ্ছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ এমন উন্নয়ন চায় না। সরকার বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নির্বাসনে পাঠিয়েছে। এই সরকারকে বিদায়ের মাধ্যমে আগে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। তার পরই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরানো সম্ভব হবে।
এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারা ব্যবহার করা হয়নি। অথচ এ পর্যন্ত ২৭ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ কালো আইনে মামলা হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এখনো ৫৭ ধারার মামলায় জেলে আছেন দৈনিক যুগান্তরের ইকোনমিক এডিটর হেলাল উদ্দিন।
বাংলামেইলের তিন সাংবাদিককে এ আইনে কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে অফিস থেকে নিয়ে গেছে র্যাব। ইনকিলাবের পাঁচজন সাংবাদিক এ আইনে জেল খেটেছেন। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে ৩০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। সাগর-রুনীসহ বেশির ভাগ খুন হওয়া সাংবাদিকের পরিবার বিচার পাচ্ছে না। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সাংবাদিক নিগৃহীত হচ্ছে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, আওয়ামী শাসনে দেশ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আগে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিল। এখন নানাভাবে শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। ছাগল মরার খবর শেয়ার করলেও এখন ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সাংবাদিককে (আবদুল লতিফ মোড়ল) গ্রেপ্তারের সময় ৫০ জনের বেশি লোক নিয়ে তার বাড়ি ঘেরাও করে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। মুরগি মরলেও মনে হয় ৫৭ ধারায় মামলা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে আমরা যখন প্রথম আন্দোলন করি তখন যারা সরকারের হালুয়া-রুটির ভাগ পেতে ব্যস্ত ছিলেন তারা এখন ৫৭ ধারা বাতিলের জন্য তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। দালালি ছেড়ে আমাদের আন্দোলনে যোগ দিন। তা না হলে সাংবাদিক সমাজ আপনাদের ক্ষমা করবে না।