ক্রাইম রিপোর্টার :
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর
কোলনঝাড় গ্রামে গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে গাছে বেধে
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শেফালী বেগম (৩২) কন্যা সন্তানের জন্ম
দিয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার
সন্তান জন্ম নেয়। তবে সময়ের আগে জন্ম হওয়ায় নবজাতকের অবস্থা
আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এর আগে গত শুক্রবার
নির্যাতনের শিকার হলে শনিবার শেফালীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের প্রধান
অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, শেফালী
বেগমের প্রসবের সময়ের ৯ সপ্তাহ আগে ৯শ’ গ্রাম ওজন নিয়ে
শিশুটির জন্ম হয়। প্রসূতি ও নবজাতক শিশুটির অবস্থা শংকটাপন্ন।
নবজাতক কন্যাটিকে নিবিড় পরিচর্চ্চা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এছাড়া
প্রসূতিকেও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে নিবিরভাবে।
প্রসঙ্গত: একটি পারিবারিক ঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার কিছু
প্রভাবশালী মহল শেফালীকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে গত শুক্রবার দুপুরে
গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। এসময় সাত মাসের অন্ত:সত্তা
ছিলেন শেফালী।
এ ঘটনাটি ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথমদিকে
অস্বীকার করলেও বিভিন্ন পত্রিকা ও নিউজপোর্টালের প্রথম পাতায় খবর
প্রকাশ হলে প্রশাসন সহ সর্বমহলে তোলপাড় সৃস্টি করে। পরে পুলিশের
উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগন সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা পেলে
তাদের হস্তক্ষেপে ওই ঘটনায় গত রবিবার গভীর রাতে ডিমলা থানায় একটি
মামলা দায়ের (মামলা নম্বর ০৬/১৭) করেন নির্যাতনের শিকার শেফালীর
মামা সহিদুল ইসলাম। মামলার ১৯জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন রয়েছে।
আসামীদের মধ্যে পুলিশ বাধ্য হয় তিনজনকে গ্রেফতার করতে ।
গ্রেফতারকৃতদের সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে
পাঠানো হয়। তারা হলো শেফালীর বড় বোন আকলিমার স্বামী রফিকুল
ইসলাম, শাশুড়ি অপিয়া বেগম ও গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম। ঘটনাটি
গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্ত করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
সেদিনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী নির্যাতীত শেফালি বেগমের ছোট
বোন শিউলি আক্তার মুন বলেন, যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। চোখে
না দেখলে বিশ্বাস হবার কথা নয়। গাছে বেধে লাত্থি, ঘুষি, কিল মারা
হলো। স্থানীয় আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের ওরফে নারিয়া কাদের অকথ্য
ভাবে নির্যাতন চালান আমার বোনের উপর।
তারা শেফালীকে গরু চুরির ঘটনা সাজিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার
চেষ্টা করেছিল।আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সেলিমুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে
কেউ এগিয়ে আসেনি শেফালীকে বাঁচানোর জন্য। সকাল ১০টা হতে
বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়েছিল শেফালীকে। পুলিশ
আসার আগে গাছ থেকে দড়ি খুলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ডিমলা থানার
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গরু চুরির নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে
ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার জোর চেষ্টা করলেও পুলিশের উর্দ্ধতন মহলের
হস্তক্ষেপে ঘটনায় মামলা দায়ের করতে তিনি বাধ্য হন। তিনি মামলারদায়ের
হওয়ার পরও ঘটনাটিকে পারিবারিক হিসেবে বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সুত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার স্বামী রফিকুলের সাথে ছোট বোন
আকলিমার ঝগড়া হলে শেফালির বাড়িতে আসে আকলিমা। পরদিন(শুক্রবার)
সকালে তিনজন মিলে আকলিমাকে রাখতে গেলে রফিকুলের বাড়িতে
গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন শেফালি। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের
করে দিলে পথিমধ্যে রফিকুলের মামা দবির উদ্দিনের উঠানে মিমাংসার জন্য
বসলে সেখানে রফিকুল ও তার মা অপিয়া বেগম নির্যাতন শুরু করেন।
একপর্যায়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক ভাবে গাছে বেঁধে রেখে
নির্যাতন চালানো হয় বিকেল পর্যন্ত অন্তসত্বা শেফালীকে।
প্রথমে জলঢাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অবস্থার সংকটাপন্ন হওয়ায়
তাকে স্থানান্তরিত করা হয় রংপুর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে।
নির্যাচিতা শেফালী ঘটনার পর ভয় আর হুমকীর কারণে মামলা করতে না
পারলেও রবিবার রাতে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মামা সহিদুল ইসলাম
বাদী হয়ে মামলা করেন ডিমলা থানায়।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ক্লোজার পাড়ার ওই ঘটনায়
উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার জানান,
আমি সে সময় ছিলাম না। নির্যাতনের চিত্রটি খুবই খারাপ হয়েছে।
এটা ঠিক হয়নি। তবে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের শাস্তি দাবী
করেন তিনি।
নির্যাতনের শিকার শেফালির খালা নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন,
ওমরা হামাক ভয়ভীতি দেখায় ছে, কিছুই বলে হইবে না। পুলিশ বলে
কিছুই করিবার পাইবেনা ওমার। হামরা এ্যালা কি করিমো।
এদিকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি কোনভাবে করা ঠিক
হয়নি মন্তব্য করে নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার
মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে
দেখছে। মামলা নেওয়া হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যারাই
জড়িত থাকুন না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান
পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান।