শহরের সব দিক সাজানো রয়েছে শুধু শাণিত দুর্দিন, বন্যা অবরোধ/ আহত বাতাস!/ আমি কার কাছে যাবো? কোনদিকে যাবো?’কবি আবুল হাসানের এ কবিতাটির মতো বন্যা প্রকৃতপক্ষে দূষিত করে দেয় সবকিছু। মানুষের জীবনে সে অবতীর্ণ হয় অভিশাপ হয়ে। বন্যা প্লাবিত অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সেই দুর্ভোগ স্পর্শ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জীবনযাত্রাকেও। বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে হতে থাকে স্বাস্থ্য সমস্যা। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, চর্মরোগ, চোখের অসুখ প্রভৃতি সমস্যা মহামারী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় করণীয় কী?
১। যেহেতু বন্যায় পানির উৎস সংক্রমিত হয়ে যায় তাই পানি ভালোমতো না ফুটিয়ে পান করা নিরাপদ নয়।
২। টিউবওয়েলের পানিও ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোট্যাব) ব্যবহার করতে হবে।
৩। ডায়রিয়া দেখা দিলেই পরিমাণ মতো খাবার স্যালাইন খেতে হবে। যেসব স্বাস্থ্যকর্মী বন্যার্তদের সাহায্যে নিয়োজিত রয়েছেন তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত স্যালাইন থাকতে হবে। যদি পাতলা পায়খানা ও বমির মাত্রা বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে।
৪। বন্যায় নিরাপদ পয়ঃপ্রণালির অভাব ঘটে। পয়ঃনিষ্কাশন নিরাপদ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময়ে কৃমির ওষুধ খেতে হয়। কেননা নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে কৃমির সংক্রমণ বেড়ে যায়। যেখানে সেখানে পায়খানা না করে একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ পায়খানার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খাবার যাতে পচে না যায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
৬। বন্যায় চর্মরোগ হতে পারে। যতটা সম্ভব শরীর শুকনো রাখতে হবে। একই গামছা বা তোয়ালে অনেকজন ব্যবহার করবেন না।
৭। চোখের প্রদাহ হলে নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে রাখবেন। কেননা সমস্যাটি ভাইরাসজনিত হলে তা অন্যদের মাঝেও সংক্রমিত হবে। ক্লোরাম ফেনিকল আই ড্রপ হাতের কাছে রাখতে হবে। নিকটস্থ স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তা ব্যবহার করতে হবে। চোখে অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮। বন্যায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ব্যাপক মশা নিধনের ব্যবস্থা না করলে ম্যালেরিয়া হতে পারে।
এক সময় মনে করা হতো বন্যা পাপের ফল। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হলো বন্যা এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করতে হলে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে। বন্যাকে নিয়তির লিখন হিসেবে চিহ্নিত না করে বন্যায় যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে তার নিরসন করতে কার্পণ্য করা উচিত নয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
কৃতজ্ঞতা/ হেলথ বার্তা