অনলাইন ডেস্কঃ
পাহাড়ের মাঝে গ্রাম। গ্রামের ওপর দুটি বিমান। আছে হেলিকপ্টারও। এসব থেকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে নিচে। গ্রামের বাড়িঘর জ্বলছে আগুনে। দুজন মানুষকেও দেখা যাচ্ছে বাড়িগুলোর কাছে।
এক রোহিঙ্গা মেয়েশিশুর আঁকা একটি ছবি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেইক। আজ কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি।
ক্যাম্পে থাকা কয়েকজন শিশুকে ছবি আঁকতে বলা হয়। এসব ছবি দেখেই অ্যান্থনি লেইক বলেন, ‘যা দেখলাম তা ভয়াব্হ।’
সংবাদ সম্মেলনে লেইক একটি ছবি তুলে ধরেন। সেখানেই দেখা যায়, বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি শিশুটিকে প্রশ্ন করলাম, ‘দুজন মানুষকে দেখা যাচ্ছে বাড়িগুলোর কাছে। এরা কোথায়? ও বলল, তাদের মেরে ফেলা হয়েছে।’
এরপর আরো একটি ছবি দেখান লেইক। ছবিটি একটি ছেলেশিশুর আঁকা।
ছবিতে দেখা যায়, হেলিকপ্টার নেমে আসছে নিচের দিকে। সেখান থেকে সেনারা আসছে। মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলছিল। সেনারা নেমে গুলি করে ছেলেদের মেরে ফেলল।
কিছুক্ষণ সময় নিলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক। তারপর বলেন, ‘ভাবুন তো যদি আপনি শিশু হতেন, তাহলে এরকম একটি দৃশ্য কতদিনে আপনার মন থেকে মুছত?
লেইক বলেন, ‘এই শিশুদের মানবিক সাহায্য প্রয়োজন এখনই। এসব শিশু যদি এভাবেই বেড়ে ওঠে, তাহলে এরকম মানসিক অবস্থা নিয়ে বেড়ে উঠলে তা একটি প্রজন্মের সমস্যা হয়ে যাবে। দ্রুত এর জন্য কিছু করা উচিত।’
অ্যান্থনি লেইক বলেন, ‘ট্রমা’ থেকে বের করে আনার জন্য আমরা রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে কাজ করি। তাঁদের ছবি আঁকতে দিয়েছি। আমি অনেক জায়গায় দেখেছি শিশুদের আঁকা ছবিগুলোতে একটা হাসিখুশি ভাব থাকে। দুর্দশায় থাকলেও যদি আঁকতে বলা হয়, শিশুরা হাসিখুশি ভাবেরই ছবি আঁকবে বা নিজের বাড়ির ছবি আঁকবে। কিন্তু এখানে যেসব ছবি দেখলাম তা ভয়াবহ। তারা যা দেখেছে তাই এঁকেছে। তারা যা দেখেছে কোনো শিশুর তা দেখা উচিত নয়।
লেইক আরো বলেন, ‘২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গারা এ দেশে আসছে। যারা আসছে তাদের ৬০ শতাংশই শিশু। এটা কেবল সংকট নয়, এটা বিপর্যয়। আমরা শুনেছি বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে সপ্তাহখানেক হেঁটে এরা এদেশে এসেছে। তারা যেভাবে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, আমি বিশ্বে এমন দেখিনি। নারীরা নিজেরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে, দেখেছে স্বজনদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে।