অনলাইন ডেস্কঃ
কোনো সহায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়, নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে, কমিশনের সঙ্গে সিপিবির সংলাপে এই মতামত তুলে ধরে দলটি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের কর্তৃত্ব কমিয়ে কমিশনকে শক্তিশালী করারও সুপারিশ করা হয়। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার পাশাপাশি প্রার্থীদের খরচ রাষ্ট্রীয়ভাবে করার পক্ষেও প্রস্তাব দেয় সিপিবি। এ ছাড়া, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে কমিউনিস্ট পার্টি। না ভোট চালু রাখার পক্ষে সুপারিশ করলেও ইভিএম পদ্ধতি এখনই চালু না করতে কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেয় সিপিবি।
এদিকে সিপিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ অংশ নেন।
সিপিবির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, রফিকুজ্জামান লায়েক, মিহির ঘোষ, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সম্পাদক আহসান হাবীব লাবলু, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও জলি তালুকদার।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আলোচনার শুরুতেই আলোচ্যসূচি উত্থাপন করেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। আলোচ্যসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল- আইনি কাঠামো সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিরীক্ষা এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি। প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
সিপিবির পক্ষে আলোচনার সূচনা করেন পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সেলিম বলেন, পাকিস্তান আমলে মানুষ সার্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। বাংলাদেশ আমলে বিশেষ করে দুটি সামরিক শাসকের আমলে ‘আমার ভোট আমি দেব’ দাবিতে সংগ্রাম করেছে। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ জাতির সামনে এসেছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর পরবর্তী ক্ষমতাসীন দলগুলোর ক্ষমতালিপ্সার কারণে বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতেই পারেনি। স্বৈরাচার আমলের মতো নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনরায় তামাশায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ঘটনা আজ এমন অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে যে, চলতি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে ঢেলে সাজানো ছাড়া তার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সিপিবির সভাপতি বলেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনের সময়ে সরকারের কর্তৃত্বকে সাংবিধানিকভাবে সংকুচিত করে তার অন্তর্বর্তীকালীন কাজ তত্ত্বাবধানমূলক ও অত্যাবশ্যক রুটিন কিছু কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ‘নির্বাচন কমিশনের’ অধীনে অনুষ্ঠান করতে হবে- কোনো সরকারের অধীনে নয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে সেলিম বলেন, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে যেকোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
সিপিবির সভাপতি সেলিম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘এলাকাভিত্তিক একক প্রতিনিধিত্বে’র পরিবর্তে ‘জাতীয়ভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ চালুর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত হয় না। এ ব্যবস্থায় সংখ্যালঘিষ্ঠ ভোট পেয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধি হওয়া যায়। তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির পরিবর্তে দলীয় ইশতেহার প্রাধান্য পাওয়ায় নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশিশক্তির ব্যবহার হ্রাস পাবে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সিপিবির পক্ষ থেকে ১৪ দফা সুপারিশমালা উত্থাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম।