অনলাইন ডেস্কঃ
বিএনপির প্রশংসার পর এবার আওয়ামী লীগেরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদা।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব সফল অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের আমলে ব্যাপক স্বাধীনতা পেয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন পৃথিবীর অনেক দেশের কমিশনের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে।
রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা। জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই দেশে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিইসি তার বক্তব্যে জিয়াউর রহমানের প্রশংসার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সরকারকে ‘প্রকৃত নতুন ধারার প্রবর্তক’ হিসেবেও অভিহিত করেন।
ওই বক্তব্যের জন্য সিইসির পদত্যাগ দাবি করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। আর এমন প্রশংসাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার কৌশলও হতে পারে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবারের সংলাপে সূচনা বক্তব্যে অনেকটা ব্যাখ্যার সুরেই সিইসি বলেন, যে কোনো দলের সঙ্গে সংলাপের আগে সংশ্লিষ্ট দলের প্রোফাইল তুলে ধরা হয়। এর ধারবাহিকতায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ তিনি তুলে ধরছেন।
সিইসি বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা উল্লেখ করে তার রাজনৈতিক সংগ্রাম, দল গঠন, দেশের স্বাধীনতা অর্জন, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় সরকার গঠনসহ তার সর্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সব সফল উন্নয়নের প্রশংসা করেন।
সিইসি নূরুল হুদা তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ থেকে এখনকার কর্মকাণ্ড এবং এ দলের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে প্রায় নয় মিনিট বক্তব্য দেন।
সিইসি বলেন, দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের মধ্যে দিয়ে তিনি বিশ্ব মাতৃকার আসনে আসীন হয়েছেন। শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, অবকাঠামো উন্নয়ন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার, পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিশ্ব ধরিত্রীর মুকুট আজ প্রধানমন্ত্রীর মাথায়।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত নিবেদিত নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন, ষেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলণ, যা ছাত্র আন্দোল হিসাবে আমরা জানি; তখনকার সফল নেতারা এখানে রয়েছেন। সত্তরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বহু অর্জন, বহুমুখী, গণমুখী সকল আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ফসল।
নূরুল হুদা বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। বঙ্গবন্ধুর হুকুমে এবং এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন, তাদের অনেকের অনুপ্রেরণায়, নির্দেশে, পরিচালনায় আমরা তরুণ সন্তান বুকে গ্রেনেড ও কাঁধে অস্ত্র নিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ঐতিহাসিক সব সফল আন্দোলন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে।
সিইসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব কাঁধে নেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন; কূটনৈতিক সাফল্যে বহু দেশের আনুকূল্য, সমর্থন অর্জন করেন। নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, ১৯৭৩ সালে জাতিকে প্রথম সংসদ নির্বাচন উপহার দেন এবং স্বাধীন দেশে প্রথম সংসদীয় সরকার গঠন করেন।
নূরুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ রেকর্ড অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট কালো রাতে জাতির জনককে সপরিবারের হত্যার মধ্যে দিয়ে জাতির জীবনে ‘কালো অধ্যায়ের’ সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে যে কঠিন সময় পার হতে হয়েছে। জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বহু বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসেন তিনি। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিন দফা সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়, রায় কার্যকর করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে। তবে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্ত্রীর অসুস্থার কারণে দেশে না থাকায় সংলাপে অংশ নেননি।
প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন- দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচটি ইমাম, মসিউর রহমান, মোহাম্মদ জমির, রশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার।